বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০১১

৭৩০ তম দিনে

০৯-০৬-২০০৯। নয়-ছয়ের খপ্পড়ে পড়েই কি না জানি না, এই দিনটাতেই এখানে এসে পৌঁছেছিলাম। এনস্কেডে, নেদারল্যান্ডসে। বেশ সকালেই স্কিফলে নেমে ট্রেনের টিকেটটা করে এয়ারপোর্টের বাইরে যেয়েই প্রায় তের ঘন্টা বাদে একটা সিগারেট ধরিয়ে আশেপাশের মানুষ দেখছিলাম। তার খানিক বাদেই পে-ফোন বুথ থেকে বাবাকে ফোন করেছিলাম। তারও বাদে ট্রেনে করে যাত্রার শেষটুকু - এনস্কেডের উদ্দেশ্যে।

ইউনি ক্যাম্পাসে আমার প্রথম বাসাটা ছিল নীচতলায়। আশেপাশে ঝোঁপঝাড়। গ্রীষ্মে একেবারে সবুজ হয়ে থাকত চারপাশ। একটু দূরেই ক্ষীণকায়া জলাশয়। বাসাটার মাঝে বেশ স্বপ্নালু একটা ভাব ছিল। আমার ঐ সময়টায় কিছুটা স্বপ্নের দরকারও ছিল - একেবারেই তখন স্বপ্নহীন ছিলাম বলেই হয়তবা।

বাসাটার সোজাসুজি একটা লম্বা রাস্তা ছিল। রাস্তার চারধারে ছিল অনেক অনেক গাছ। ছায়া দিয়ে রাখত ওরা সবসময়। আমি ঐ রাস্তাটার নাম দিয়েছিলাম 'স্বপ্ন রাস্তা'। আর গাছগুলি ছিল আমার বন্ধুদের মত। বন্ধুরা ছায়া দিয়ে আমাকে আমার স্বপ্নের চৌরাস্তায় পৌঁছে দিয়ে যাবে।

তিন মাসের মাথায় ঐ বাসা ছেড়ে দিয়ে এসেছিলাম আমার এখনকার বাসায়। এই বাসাটা আকাশের কাছাকাছি। পাঁচ তলায়। এখান থেকে আর মাটির ঘ্রাণ পাই না, আকাশের শূন্যতা অনুভব করি। নিজের ভেতরকার শূন্যতাও কী? নিজেকে প্রশ্ন করি না ভয়ে। যদি স্মৃতিগুলোর উপর জমে থাকা ধূলো সরাতে গিয়ে নিজেকেই স্মৃতির অতলে হারিয়ে ফেলি?

এইতো বেশ ভালো আছি। বর্তমানকে আঁকড়ে ধরে। কোন একটা শিশিরভেজা সুন্দর সকালের অপেক্ষায়। কখনও যে আসবেই তা সেই নিশ্চয়তা কী আছে? নাই বা থাকলো। স্বপ্নহীন হয়ে বেঁচে থাকা অনেক বড় কষ্টের।

কত্তগুলো দিন চলে গেল এই প্রবাসে! একা একা। প্রিয়জনদের সান্নিধ্য থেকে অনেক দূরে। মাঝে মাঝে চিন্তা করি; যা হতে চেয়েছিলাম তা কী হতে পেরেছি? অথবা আমি কী আসলেই জানতাম আমি কি হতে চাই? কিংবা হয়ত আমার একা থাকতেই ভালো লাগে। কী জানি!

আর লিখব না। এখন সাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসের চারপাশে ঘুরে বেড়াবো। আমার অনেক প্রিয় একটা কাজ। রাতের নীরবতা আমার নীরবতাকে ম্লান করে দেয়। আমি খুশি হই। আমার থেকেও নিঃসঙ্গ কাউকে অনুভব করতে পেরে।

----------------------
এনস্কেডে থেকে
০৯-০৬-২০১১

২টি মন্তব্য:

shahan বলেছেন...

দুই বছর! দুই বছর!!

দুইটা বছর কোনদিক দিয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। মাঝে মাঝে গভীর রাতে যখন বাসায় ফিরি, আইইউটির সেই অন্ধকার লোডশেডিংয়ের রাতগুলার কথা মনে পড়ে। ডিপার্টমেন্টালের পিছনে বসে আড্ডা মারতে মারতে ঘন্টার পর ঘন্টা পার করে দেওয়া, বাসায় ডাইনিং টেবিলে সন্ধ্যায় বসে ভোর পার করে ঘুমানো কিংবা দুপুরে গরমে ঘামতে ঘামতে গরু দিয়ে খিচুড়ি খাওয়া- বছর দুই-তিনেক আগে সেইটাই যে আমাদের জীবন ছিল বিশ্বাসই হতে চায় না।

সামনের মাসে আমারো দুই বছর হবে প্রবাসে। দুইটা বছর কিভাবে পার করে ফেললাম ভাবতে গিয়ে দেখি উল্লেখ করার মত তেমন কিছুই করি নাই, আবার অনেক কিছুই করছি। তবে সবচেয়ে বড় পাওয়া অসাধারণ কিছু মানুষের সাথে পরিচয় হওয়া।

আপনাকে এয়ারপোর্টে সি-অফ করতে যাওয়ার কথা মনে পড়ল। আপনি ঢুকে যাওয়ার পরে আমরা তিনজন কোন কথা বলি নাই, চুপচাপ গাড়িতে উঠে আইইউটি ফিরে যে যার রুমে ফেরত। বেশ অনেকদিন আমরা এত চমৎকার সময়ে ছিলাম যে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যে অবশেষে আপনি চলেই গেলেন।

রেজওয়ানুল হক বলেছেন...

আমাদের ঐ একত্রে থাকার সময়টুকু আসলেই অনেক জোশ ছিল। আমাদের কাছে এখন তা 'রিমঝিম সুদূরপুর'।