শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১০

চলিতে চলিতে থেমে যায় - ২

১।
যে জন্য ব্লগ লেখা - স্মৃতি ধরে রাখা, নিজের অনুভূতিগুলোকে একেবারেই রঙচঙহীন অবস্থায় তুলে রাখা আর অনেকদিন পরে কোন এক অলসবেলায় সেই লেখাগুলোর সাথেই নিজের কথা বলা; আজ ঠিক তাই করলাম।

২।
প্রায় চারমাস কেটে গেছে শেষ লিখেছিলাম। আর শেষ লেখাটা পড়ে দেখলাম ওটাও প্রায় দু'মাস বিরতি দিয়ে লেখা। বোঝা যাচ্ছে বেশ; ছাইপাশ, এলেবেলে, এলোমেলো যা লিখতাম তাও আমাকে ছেড়ে গেছে। গাণিতিক ক্রমের নিয়ম মেনে হয়ত পরের লেখাটা হবে ছয় মাস পরে। দেখা যাক ... :)

৩।
সিঙ্গাপুরে ঘুরে এলাম মাঝ দিয়ে। কনফারেন্সের পেপার সেশন বাং মেরে শহর ঘুরে বেড়ানোর মজা ঠিক ক্লাস বাং মারার মতনই। দারুণ ছিমছাম একটা শহর। ছোট্ট একটা জেলে পল্লী এখন কত উন্নত। কেন? ওরা পারলে আমরা কেন পারি না? মালয়ী, চীনা তামিল আরো নানা বর্ণের মানুষ ওখানে। ওরা যদি এতটা একতাবদ্ধ হতে পারে তবে আমরা প্রায় সবটুকুই বাঙালিরা পারি না কেন? আমার ধারণা, আমাদের রক্তের ভিতরেই একগুঁয়েমির বীজ বোনা। আমরা বোকা এবং শয়তান। আমরা ধৈর্যহীন। আমরা ব্লগে ব্লগে এসব লিখে বেড়াই কিন্তু বিনা মিটারের সিএনজি বর্জন করতে পারি না। আপনি, আমি অবশ্য বর্জন করেও কোন লাভ নেই। আমাদের মধ্যেই কোন একজন সেই সুযোগ গ্রহণ করবে। মাঝেমাঝে মনে হয়, গণতান্ত্রিক সরকার থেকে অগণতান্ত্রিক, কিছুটা দেশপ্রেমিক একনায়কতন্ত্র অনেক ভালো। সিঙ্গাপুরকেই দেখুন না!

৪।
বাংলাদেশ ঘুরে এসেছিলাম সিঙ্গাপুর থেকে। একেবারেই নীরবে। দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েই চলেছে। এই যেমন বেনসন একটা ৬ টাকা। ৭০/৮০ টাকার সিএনজি ভাড়া ১০০-১২০ টাকা ইত্যাদি ইত্যাদি। হিসাব করে দেখলাম এক মাস বাংলাদেশে থাকলেই মনে হয় ইঊরোপের চেয়ে খরচ বেশি হয়।

৫।
টরোন্টো ঘুরে আসার সুযোগ পেলাম বাংলাদেশ থেকে আসার পর পরই। দেড় বছর ধরে জ্ঞানার্জনের প্রাপ্তি এই ঘোরাঘুরি। আমি মুগ্ধ। প্রথম মুগ্ধতা পথে ঘাটের লোকের কথা আমি বুঝতে পারি। ডাচ যেহেতু জানি না, এখানে চলাফেরা করলে লোকজনের কথা কিছুই বুঝি না। ব্যাপক বিরক্তিকর। নর্থ আমেরিকায় স্বাভাবিকভাবেই এই সমস্যায় পড়তে হয় না। বেশ ঘোরাঘুরি করেছি ওখানে। টরোন্টো জু, কাসা লোমা, সিএন টাওয়ার আর নায়াগ্রা ফলস। অফ-সীজনে যাওয়ায় নায়াগ্রা ফলসের পুরো আভিজাত্য হয়ত দেখিনি তবে এই আমার কাছে ঢের। অনেকদিন মনে থাকবে টরোন্টো আর বন্ধুদের বিশেষ করে আমার আইইউটির রুমমেট সবুজ আর জুনিয়র ফারাবীর আতিথেয়তার কথা।

৬।
ব্যাক টু রিয়েলিটি। পেপার এর ডেডলাইন আছে ২২ তারিখ। কোডিং কেবল শেষ করলাম। Java, SQL আর SPARQL এর Syntax এর চোটে সবকিছুই এখন ঘোলা ঘোলা লাগছে। মেইন প্ল্যাটফর্মে এখনও Integration করা বাকি। তারপর রেজাল্ট কালেকশন। এবং পেপার লেখা ... শেষ লাইনটা অবশ্য ঠিক করে রেখেছি এখনই; Our algorithm outperforms ... এর নামই জ্ঞানার্জন।

৭।
আজকে আমাদের ডাটাবেস গ্রুপের প্রফেসরের চাকরির ২৫ বছর উদযাপিত হল। এই উপলক্ষে তার সব প্রাক্তন আর বর্তমান ছাত্রদের নিয়ে "বিশাল সমাবেশ" আর খানাপিনা ছিল। অনেকেঢ় কর্মজীবনেই তাদের আগের গবেষণার কোন সুস্পষ্ট প্রভাব নেই। এক মহিলা এসেছিলেন। তিনি এখন ৭ একর জায়গায় বাগান বাড়ি করেছেন। সারাদিন বাগান নিয়েই থাকেন। অনেকে চলে গেছেন ম্যানেজেরিয়াল লাইনে। আর খুব কমই আছেন শিক্ষকতায়। জীবনের মজা তো এটাই না? শেষটা কখনও দেখা যায় না।

৮।
গত সামারে বার্লিন বাদে আর কোথাও ঘোরা হয়নি। এখন এদিককার আবহাওয়া খুবই খারাপ। তারপরও মনে হয় ব্রাসেলসে যেতে পারি। আসল কারণ ওয়ার্কশপ আর সাথে কলাটিও বেচে আসি।