শনিবার, ২৫ জুন, ২০১১

চলিতে চলিতে থেমে যায় - ৩

সুখী হওয়ার জন্য কী লাগে? কালো টাকা, সাদা টাকা? গাড়ী-বাড়ী-নারী?

খুব বেশি দিন হয়নি শেষবার যাওয়ার। আবার যাচ্ছি। এই ক'দিন আকন্ঠ কাজে ডুবেছিলাম। টের পাইনি। দেশে যাওয়ার দিন এখন এত্ত কাছে। এই যে যাবো দেশে, এই চিন্তা করেই আমি এখন মস্ত সুখী। গলা ছেড়ে গান গাইছি। রাতের বেলা সাইকেল নিয়ে পাড়া মহল্লায় ঘুরছি আর চিৎকার করছি। সুখী হওয়ার জন্য আসলে তেমন কিছুই লাগে না, শুধু নিজের ইচ্ছেটা থাকলেই হয়।

প্রতিদিন খবর নেই। দেশে গরম কতটা। কলিগরা জানতে চায় ওয়েদার কী রকম। বলি, হট অ্যাণ্ড হিউমিড। কই, তারপরওতো এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে এই হট অ্যাণ্ড হিউমিডের মধ্যে যখন দাঁড়াবো তখন তো ঠিকই মনটা জুড়িয়ে যাবে।

দেশে যেয়ে প্রথম কথা হয় কার সাথে বলবো? সিএনজি চালক মামার সাথে। আমি কখনও মামাদের সাথে বেশি কথা বলি না। শুধু এই একটা সময় বাদে। অনেক কথা বলি এবং সিগারেট অফার করি। তারপর সিএনজি যেয়ে প্রথমে থামে একটা মানি এক্সচেঞ্জের কাছে। পকেট ভর্তি টাকা নিয়ে পরের গন্তব্য ... পুরো ঢাকা।

তার কিছুক্ষণ পরে হয়ত পরিপাটি আমি বের হয়ে যাবো ঢাকার রাস্তায় রাস্তায়। আর সন্ধ্যারও পরে যখন ফিরবো তখন চুল হয়ত ভিজে হয়ে থাকবে ঘাম আর জেল একত্রে মিশে। টি-শার্টটা আর একবারও পরা যাবে না, না ধুয়ে। ক্লান্ত থাকবো আমি। তারপরও সুখী আমি।

অনেক প্ল্যান থাকে। কোন হোটেলে খাবো, কই কই যাবো, ইত্যাদি ইত্যাদি। সবকিছু কোনবারই করা হয়ে ওঠে না। এই যে, এবার যেয়ে করবো বলে ...

আর মাত্র কিছু দিন, কিছু ঘন্টা। তারপর বাংলাদেশে।

বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০১১

৭৩০ তম দিনে

০৯-০৬-২০০৯। নয়-ছয়ের খপ্পড়ে পড়েই কি না জানি না, এই দিনটাতেই এখানে এসে পৌঁছেছিলাম। এনস্কেডে, নেদারল্যান্ডসে। বেশ সকালেই স্কিফলে নেমে ট্রেনের টিকেটটা করে এয়ারপোর্টের বাইরে যেয়েই প্রায় তের ঘন্টা বাদে একটা সিগারেট ধরিয়ে আশেপাশের মানুষ দেখছিলাম। তার খানিক বাদেই পে-ফোন বুথ থেকে বাবাকে ফোন করেছিলাম। তারও বাদে ট্রেনে করে যাত্রার শেষটুকু - এনস্কেডের উদ্দেশ্যে।

ইউনি ক্যাম্পাসে আমার প্রথম বাসাটা ছিল নীচতলায়। আশেপাশে ঝোঁপঝাড়। গ্রীষ্মে একেবারে সবুজ হয়ে থাকত চারপাশ। একটু দূরেই ক্ষীণকায়া জলাশয়। বাসাটার মাঝে বেশ স্বপ্নালু একটা ভাব ছিল। আমার ঐ সময়টায় কিছুটা স্বপ্নের দরকারও ছিল - একেবারেই তখন স্বপ্নহীন ছিলাম বলেই হয়তবা।

বাসাটার সোজাসুজি একটা লম্বা রাস্তা ছিল। রাস্তার চারধারে ছিল অনেক অনেক গাছ। ছায়া দিয়ে রাখত ওরা সবসময়। আমি ঐ রাস্তাটার নাম দিয়েছিলাম 'স্বপ্ন রাস্তা'। আর গাছগুলি ছিল আমার বন্ধুদের মত। বন্ধুরা ছায়া দিয়ে আমাকে আমার স্বপ্নের চৌরাস্তায় পৌঁছে দিয়ে যাবে।

তিন মাসের মাথায় ঐ বাসা ছেড়ে দিয়ে এসেছিলাম আমার এখনকার বাসায়। এই বাসাটা আকাশের কাছাকাছি। পাঁচ তলায়। এখান থেকে আর মাটির ঘ্রাণ পাই না, আকাশের শূন্যতা অনুভব করি। নিজের ভেতরকার শূন্যতাও কী? নিজেকে প্রশ্ন করি না ভয়ে। যদি স্মৃতিগুলোর উপর জমে থাকা ধূলো সরাতে গিয়ে নিজেকেই স্মৃতির অতলে হারিয়ে ফেলি?

এইতো বেশ ভালো আছি। বর্তমানকে আঁকড়ে ধরে। কোন একটা শিশিরভেজা সুন্দর সকালের অপেক্ষায়। কখনও যে আসবেই তা সেই নিশ্চয়তা কী আছে? নাই বা থাকলো। স্বপ্নহীন হয়ে বেঁচে থাকা অনেক বড় কষ্টের।

কত্তগুলো দিন চলে গেল এই প্রবাসে! একা একা। প্রিয়জনদের সান্নিধ্য থেকে অনেক দূরে। মাঝে মাঝে চিন্তা করি; যা হতে চেয়েছিলাম তা কী হতে পেরেছি? অথবা আমি কী আসলেই জানতাম আমি কি হতে চাই? কিংবা হয়ত আমার একা থাকতেই ভালো লাগে। কী জানি!

আর লিখব না। এখন সাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসের চারপাশে ঘুরে বেড়াবো। আমার অনেক প্রিয় একটা কাজ। রাতের নীরবতা আমার নীরবতাকে ম্লান করে দেয়। আমি খুশি হই। আমার থেকেও নিঃসঙ্গ কাউকে অনুভব করতে পেরে।

----------------------
এনস্কেডে থেকে
০৯-০৬-২০১১