শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১০

... I wanna grow up once again ...

মাঝে দিয়ে পুরো একটা সপ্তাহ চলে গেল। শখের জ্বরে পড়েছিলাম, বরফ আর ঠাণ্ডা বাতাসের সাথে সখ্যতা একটু বেশি করে। ডাচ ভাষা শিক্ষা কোর্স চলছিল। শেষ হল। উচ্চারণে অনেক সমস্যা। অল্প কিছু শব্দ অবশ্য শিখেছি। আর সবচেয়ে কষ্টকর কাজটা আবার শুরু করতে হল; রিসার্চ। এই কাজটা করতে আমার কোন মন নেই।

নতুন লেন্স হাতে পেয়েই ছবি তোলার জন্য হাত সুড়সুড় করছিল। নিক্কর ৫৫-২০০ মিমি ভি আর। কেনার আগে বেশ দ্বিধাদ্বন্দে ছিলাম ৭০-৩০০ আর এটা নিয়ে। ৭০-৩০০ মিমি এর দাম এটার দ্বিগুণেরও বেশি। পারতাম হয়ত কিনে ফেলতে। তারপরও শেষ মুহুর্তে কিছুটা কৃচ্ছতা সাধন করলাম। হয়ত বাড়তি যে টাকাটা লাগতো সেটা হঠাৎ করে দেশে গেলে কাজে দিতে পারে। আর তারপর লেন্স হাতে পাওয়ার ৪/৫ দিন পরে বের হলাম ছবি তুলতে। এফবিতে তুলে দিয়েছি আগেই, অল্প ক'টা এখানেও। অনেকক্ষণ ঠাণ্ডার মধ্যে বাইরে ছিলাম ঐদিন। ফলাফল হাতে নাতেই পেয়ে গিয়েছিলাম। এফবিতে ছোট্ট করে 'জ্বর' লিখে দিলাম। এখানে আইণ্ডহোভেনে রিমি আপুর বাসার দাওয়াতে যেতে পারলাম না। কত্ত মজার মজার খাবার থেকে বঞ্চিত হলাম। তবে তার বদলে অবশ্য কিছু পেয়েছিলাম। কী? ... নাহ, এখানে বলা যাবে না। কানে কানে বলবো।

 

ডাচ ভাষার কোর্স শেষ হল। দু'টো পরীক্ষা ছিল। সম্মানের সাথে উৎরে গিয়েছি। আমাদের গ্রুপের সেক্রেটারী ইডা আর আমার রুমমেট রবিন এখন প্রতিদিন ৫ মিনিট করে আমার সাথে ডাচ বলে। অল্প কিছু কথা বুঝতে পারি, তবে বলতে হবে ধীরে ধীরে। আর নিজের উচ্চারণ নিয়ে অনেক বড় বিপদে আছি। রবিনের সাথে কথা বলার সময় প্রথমে বলি আর তারপরে লিখি দেই। তারপর রবিন বুঝতে পারে কী বলছি। ডাচ ভাষা বলা বড়ই কঠিন; আর তার থেকেও কঠিন নারীদের মন ভজানো। তবে আমার এবারের মিশন, "আমি চিরতরে দূরে সরে যাবো, তবু আমারে দেব না ভুলিতে" টাইপ। দোয়াপ্রার্থী।

একটা জিনিস ঠিক করে ফেলেছি। সামনের জুনে আমার "ফার্স্ট ইয়ার অ্যাসেসমেন্ট" হবে। ঐ সময় সিদ্ধান্ত নিব, আমি সত্যিই পিএইচডির পিছনে লেগে থাকবো কী না? যদি ছেড়ে দেই তবে আর কখনোই ওমুখো হব না। আর না হলে লেগে থাকবো শেষতক। দেখা যাক, কী হয়?

বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ ইচ্ছা করে কমিয়ে দিয়েছি আপাতত। কেন? বলতে পারবো না। হয়তো আবার পুরোদমে ওদেরকে বিরক্ত করবো বলে আটঘাট বেঁধে নামছি বলে। বন্ধুরা ভুলে যাস না। আমি আছি, এখানেই। আর চিন্তা করছি। কী? ইস্টারের ছুটির সাথে আর ক'টা দিন নিয়ে ঘুরে আসব কোথাও থেকে। জায়গাটা কই? হতেও পারে ... বাংলাদেশ।

দু'দিন আগে মন খারাপ ছিল বকরের মৃত্যুতে আর হামীমের দুর্ঘটনায়। একটা প্রশ্ন মাথায় আসে। খুবই গরীব পরিবারের সন্তান বকরেরই কেন এরকম পরিণতি হতে হল? সৃষ্টিকর্তা কী বুঝতে পারেননি ওকে হারিয়ে ওর পরিবারের কী অবস্থা হতে পারে? না কী তিনি অন্ধ? আমাকে কে কেউ বলতে পারবেন কোন ভালোটা এর মধ্যে নিহিত আছে? এরকম নিষ্ঠুর একজন স্রষ্টার সৃষ্টি আমি। ধিক আমাকে।

ধিক আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়াকেও। রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়াটাই আপনার কাজ। এরকম ক'টা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটার পর আপনাদের টনক নড়বে? আর যদি নাই নড়ে তাহলে কিন্তু আপনাদের গদিটাও নড়ে যেতে পারে। হ্যা, ওটাও হতে পারে একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আরও দায়িত্বশীল আচরণ আপনার কাছ থেকে আমরা প্রত্যাশা করি।

আর আমাদেরও দোষ আছে। এই খবরটি পড়ুন। আমরা নিজেরাই যদি সচেতন না হই, তাহলে হামিম আর সুমির মতন অনেক প্রাণই অকালে ঝরে যাবে। আমরা কি পারি না, একটু কষ্ট করে ফুট ওভার ব্রীজ বা জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করতে? আমার এক বন্ধুই গতকাল বলছিল, ওর ওভার ব্রীজ অনেক উঁচু লাগে তাই উঠে না। ওকে তখন বলিনি, তোমার কোন অঘটন হলে, তুমি বেঁচে যাবে আর তোমার চারপাশের অনেকগুলো মানুষকে দিয়ে যাবে এক বোঝা কষ্ট। বন্ধুটা আমার যেন এরপর থেকে একটু সতর্ক হয়।

২০টি সোনার টার্গেট ছিল। এ পর্যন্ত পেলাম ৫টি। ফুটবল আর ক্রিকেটের ফাইনালে। হকিতে ভারতের সাথে ৩-৩ গোলে ড্র। একেবারেই খারাপ আমি বলব না। ছোটবেলায় রাত জেগে প্রতিদিন হাইলাইটস দেখতাম। এখনও দেখতে ইচ্ছা করে। উপায় নাই গোলাম হোসেন। আরও কত কিছু করতে ইচ্ছা করে। হঠাৎ হঠাৎ কাউকে চমকে দিতে ইচ্ছে করে। হুট করে দেশে চলে যেতে ইচ্ছে করে। প্রিয় মুখগুলো দেখে আসতে ইচ্ছে করে। বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই কিছু জমানো কথা বলে আসতে ইচ্ছা করে। এরকম কত শত টুকরো টুকরো ইচ্ছা। কোন কোনটা পূরণ করা হয়ে উঠবে আর কোনটা কখনই নয়। ইচ্ছেগুলো একসময় মরে যাবে অপর্যাপ্ত পরিচর্যায়।

আজকে উইকেণ্ডের শুরু। শনিবার সকাল। অনেক ভোরে উঠেছি। প্রায় ৬ টার দিকে। একটা গানই কেবল শুনে যাচ্ছি এখন। আমার প্রিয় একটা গান

তুমিও একবার শুনে নিও।।