শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১০

আকাশ মেঘে ঢাকা, বরফ কণা ঝরে

১: আজকের সকাল
ক্লাসে ঢুকতেই ইঙ্গে (আমাদের শিক্ষিকা) ডাচে কি যেন বললেন। সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম। পরে উনিই তর্জমা করলেন ইংরেজীতে। আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল heel goed (খুব ভালো)। আজকে লাঞ্চের পর আর ক্লাস হবে না। অফিসে আর কে যায়? বাসায় এসে ফেসবুকে পোংটামি করা শেষে ভাবলাম একটু লিখি।


২: অনেকদিনের চাওয়া পূর্ণ হল
এনটিভির রিপোর্টারের গলা শুনতে পাচ্ছিলাম; স্পষ্ট নয়। কারণ আমি তখন টেলিফোনের ওপাশে। ২৭ তারিখ দিবাগত রাতের কথা বলছি। ততক্ষণে দু'জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। জন্মেছি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার ৭ বছর পরে। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আর ৭৫ পরবর্তী সময়ে তাকেও বেশ রাজনৈতিক হয়রানির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তাই বঙ্গবন্ধুকে জানার হাতখড়ি বাবার কাছেই। আমার মতে, উনি অনেক বড় মাপের নেতা কিন্তু ততটা সফল রাষ্ট্রনায়ক নন। কেন নন এই বিতর্কে যাওয়ার মত এলেম আমার নেই। সে যাই হোক, এরকম নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সম্পূর্ণ বিচার বিভাগীয় তদন্তের মধ্য দিয়ে রায় পাওয়া এবং কার্যকর করা অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য একটা মাইলফলক হিসেবেই বিবেচিত হবে। সেই চিন্তা চেতনা সমুন্নত রেখেই অন্যান্য সকল রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ও একই সাথে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া জরুরী। তবেই প্রধানমন্ত্রির দেওয়া বক্তব্য সার্থকতা পাবে, দেশ সত্যিই এগিয়ে যাবে।

আমার ধারণা আমি কখনই ঘোরতর আওয়ামীপন্থী নই। বরং সমমনা কাউকে পেলে সমালোচনাই বেশি করি যদিও বিপরীত চিন্তার লোকদের কাছে আমার প্রকাশভঙ্গীটা হয় "বিচার মানি কিন্তু তালগাছ আমার" টাইপের। ক্ষমতাসীন সরকারে কাছে প্রত্যাশা একটাই তাঁরা যেন দেশের মানুষের কথা একটু হলেও ভাবেন। ১০ টাকা পেলে যেন পুরোটাই নিজেদের পকেটে না পুরে ৫ টাকা অন্তত দেশের স্বার্থে ব্যয় করেন। ওনারা কী শুনবেন আমাদের এই কথাটা? না কী আগেই কানে তুলো গুঁজে বসে আছেন?

৩: নিজের ছায়ার পিছে ঘুরে ঘুরে মরি মিছে
দেশের কথা, যাদেরকে পিছনে ফেলে রেখে এসেছি, তাঁদের কথা সবসময়ই মনে হয়। আমি সঙ্গপ্রিয় মানুষ এবং আমার ধারণা আমার সঙ্গও অনেকের কাছেই বেশ কাঙ্ক্ষিত ... :P। ইদানীং কাজের সময়টুকু বাদ দিয়ে পুরোটা সময়ই ঘরে বসে থাকতে হয় Slecht Weer এর জন্য। বুঝলেন না তো? বুঝিয়ে বলছি একটু পরই। কোন বন্ধুর সাথে কথা বললে বা ফেসবুকে ফাজলামি করলে পরে সময়টা খারাপ যায় না। কিন্তু যখন কাউকেই পাওয়া যায় না, তখন? আমার তো এমন কেউ নেই, যে আমার পথ পানে চেয়ে আছে। আবার এমন অনেকেও আছেন যারা না চাইতেও অন্য কেউ তাঁদের অপেক্ষায়। অবিচার নয় কী? না কী সেই চাওয়া আর পাওয়ার মধ্যের পুরোনো টানাপোড়েন? মাঝেমাঝে নিজেই নিজেকে দেখার চেষ্টা করি ৫ বছরের পরের আমি কে। দেশের মাটিতে নাকি তুষারপাত এর মধ্যে বাইক চালিয়ে অফিসে যাচ্ছি? হাতটা কী তখনও বাড়ানো থাকবে বা হয়তো কেউ এসে ধরবেন খুব শক্ত করে, ছেড়ে যাবেন না কখনও অথবা আমি নিজেই হাতজোড়া প্যান্টের পকেটে গুঁজে রাখবো প্রত্যাখিত হতে ভয় ও কষ্ট দু'টোই পাই বলে। আগে থেকে জেনে গেলে জানি কোন মজা নেই, তারপরও আমার ধারণা মানুষ কখনই পুরোপুরি অনিশ্চয়তার মাঝে নিজেকে খুঁজে পেতে চায় না। একটু দূরে হলেও বাতিঘর থাকতে হয় পথটা দেখানোর জন্য। যাদের আলো আছে হাত ধরাধরি করে তাঁদেরকে ইদানীং বড্ড হিংসা করি।

নিজেকে কবে অন্যের হিংসার পাত্র হিসেবে দেখবো তা মনে হয় উপরে বসে যিনি মজা দেখছেন তিনি নিজেও জানেন না। পুরো পৃথিবীটাই তো তাঁর পরীক্ষাগার আর আমরা সেই গিনিপিগ। কিন্তু গিনিপিগের ও তো ছোট্ট একটা হৃদয় থাকে। ওটা উনিও বুঝেন না আর ওনার সৃষ্টিরাও মাঝে মাঝে অবুঝ হন। তাহলে, উপায় কি? লাগে রাহো ... :D

৪: Ik leer Nederlands.
মানে হল ডাচ ভাষা শিখছি। একেবারেই বিগিনারদের জন্য। ৬ দিন ক্লাস, প্রতিদিন ৬ ঘন্টা করে। শব্দ মনে থাকলেও উচ্চারণ করাটা আমার জন্য রীতিমতন হিমালয় পাড়ি দেওয়ার মতন। এক 'উ' শব্দটাই আছে বেশ কয়েকটা। কোন কোনটা বাতাস ছেড়ে দিয়ে। আবার কোনটা বাতাস ধরে রেখে। আর ডাচ শব্দগুলোও আকারে ডাচ লোকজনের মতই। ইয়া বড় বড়। আরো আছে 'খকখক' সাউণ্ড। সব মিলিয়ে যা শিখছি তা কিছুক্ষণের মধ্যেই জগাখিচুরি পাকিয়ে যাচ্ছে। বাই দ্য ওয়ে, Slecht Weer মানে হল খারাপ আবহাওয়া। বিশেষ করে আজ সকাল হতেই বেশ তুষারপাত। বাইকে করে যাওয়ার সময় দু'বার প্রায় পড়ে গিয়েছিলাম। সামনে কোন মেয়ে থাকলে অবশ্যই পড়ে যেতাম। ছিল না বলে রক্ষা। এক বন্ধুকে বলছিলাম এ কথা। সাইকেল চালানো নিয়ে আরো অনেক মজার কথা আছে। সচিত্র প্রতিবেদন দেওয়া যাবে পরে কোন এক সময়। এখন বরফে ঢাকা কিছু ছবি দেখেন আমার ক্যাম্পাসের (আইফোনে তোলা বলে মান একটু খারাপ)। আকাশটাই শুধু ছিল মেঘে ঢাকা; তোমার দু'ফুটের মধ্যে যাওয়ার সৌভাগ্য এখনও হয়নি আর শাওন ধারাটাও ছিল না তখন।

 

 





৫: টুকরো কিছু
বাংলাদেশ আরও একবার হতাশ করলো। আমি ওদের সামর্থ অনুযায়ী ভেবেছিলাম অন্তত চতুর্থ দিনের শেষ সেশন পর্যন্ত হয়ত ব্যাট করতে পারবে। ভারতের সামনে লক্ষ্য হবে এক দেড়শ রান। না, আমি ভুল ভেবেছিলাম। যা ঘটল তা হল 'জহির'। এই ঝড়টার নামতো জহির ই দেয়া যেতে পারে, না কী?

ইদানীং নিজের রান্না আর একেবারেই মুখে দিতে পারছি না। মনে হয় একজন রান্নার লোক দরকার ... :P

এই মুহুর্তে ভীষণ কষ্ট আর রাগ লাগছে? কেন তা বলা যাবে না। গোপনীয়।

এবং ক্ষুধাও লেগেছে। সুতরাং, এই গানটা শুনতে থাকেন আর আমি বিদায় নেই ... ... ...

---------------------------------
Twee over half drie
29 Januari, 2010
Uit Enschede

মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১০

নিজের একটা জায়গা দরকার

অনেক আগেই খুলে ছিলাম এই ব্লগস্পটটা। উৎসাহদাতার ভূমিকায় ছিল শাহান; আমার ছাত্র, পরবর্তীকালে কলিগ এবং তারপর অনেক ভালো আর কাছের বন্ধু। আমার বন্ধু ভাগ্য বরাবরই ভালো। আসবে তাদের কথা একে একে।

সেইসময় আমি ছিলাম একটু অন্যরকম মানুষ। প্রায় দেড় বছরের ব্যবধানে আমার জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। আর তাইতো এখন কিছুটা সময় পড়ে থাকে অনাদরে, অবহেলায়। তাদেরকে কুড়িয়ে নিলাম আজ। ভাবলাম তবে হোক না ওদের একটু ব্যবহার। আর কিছুদিন ধরেই কেন জানি না একেবারেই নিজের একটু জায়গার প্রয়োজন বোধ করছিলাম। যেখানে আমার অনেক বেশি ভেবে লিখতে হবে না, আমার অনুভূতিগুলোতে একেবারেই ছুরি-কাঁচি চালানোর দরকার হবে না। আমি আমার মতন করে বকব, বলব।

অস্থির মানুষ আমি। তাইতো অফিসে বসেই শুরু করে দিলাম। এই জায়গাটা হবে একেবারেই আমার মতন। এইখানে থাকবে আমার প্রিয় মানুষগুলোর কথা, আমার কথা আরও অন্য অনেকের কথা। থাকবে অনেক ছোট্ট ছোট্ট অনুভূতি আমার। জীবনের শেষে এসে উল্টে যাবো এই ই-ডায়েরীর পাতা। নিজেকে দেখতে পাবো, আরো দেখতে পাবো আমার আশেপাশের প্রিয়-অপ্রিয় মানুষগুলোকে। কখনও আমার ঠোঁটে ফুটবে এক চিলতে হাসি বা কখনও মৃদু ভ্রুকুঞ্চন অথবা চোয়ালগুলো হয়ে উঠবে শক্ত। সময়টাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য আপাতত এর চেয়ে ভালো কোন কিছুর কথা আর মনে পড়ছে না।

এই যেমন ধরুন না আজকের দিনটার কথা। সকালে বাসা থেকে বেরোনোর আগেই দেখলাম চমৎকার রোদ। অফিসে এসে বুঝলাম মুদ্রার সবসময়ই উল্টোপিঠও থাকে। বাইরে ছিল ভয়ংকর বাতাস। হাত-পা প্রায় অবশ। হয়ে গেল কয়েক দফা চা আর সেই সাথে সাথে দিন শুরুর রুটিন কাজগুলি; ফেসবুকিং, মেইল চেক, পেপার পড়া ইত্যাদি ইত্যাদি।

খুব মনটা খারাপ হল বাংলাদেশের খেলার শেষভাগের লাইভ আপডেটটা দেখে। ঘুম থেকে যখন উঠি বাংলাদেশে তখন বিকাল তিনটার মত। দলের রান ১৬০-১৭০ আর তামিমেরই ১২০ এরও বেশি। খুব মজা পেয়েছিলাম। কিন্তু দিনের শেষ ওভারের আগের ওভারটাতে আউট হয়ে গেল। আবার হতাশায় পুড়লাম। এত কাছে এসে যদি ফিরে যেতে হয় তবে তা বুকের মাঝে অনেকক্ষণ চেঁপে বসে থাকে।

এরকম একটা কিছুই চেঁপে বসেছিল গতরাতে। আজকে সকালে উঠে ভাবলাম ... ধূর, জীবন তো একটাই। কী হবে এতকিছু চিন্তা করে? চলুক না, যেমন চলছে। আর ভেবেচিন্তে কাজ করতে গেলেই আমার গুবলেট হয়ে যায় বেশি।

খুব মজা পাচ্ছি এখানে লিখে। নিজের জন্য লিখছি বলেই আরো ভালো লাগছে। আরো লিখবো।
এখন থাক।

---------------------
বিকাল ৪টা ৫৫
জানুয়ারী ২৬, ২০১০
এন্সকেডে থেকে