বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

আমি আর সিএসই'১২

১৪ বছর বেশ লম্বা একটা সময়। 
২০০১ সালের জানুয়ারি মাস। কোন এক শীতের সকালে আইইউটিতে ভর্তি হলাম। সেই শুরু। আর আজ শেষ।
২০০৪ এর শেষ দিক পর্যন্ত ছাত্র আর তারপরই জীবনের প্রথম চাকরি আইইউটিতেই। সময় কত দ্রুত চলে যায়। আজ ২০১৪। শিক্ষকতা জীবনেরও দশ বছর পার হয়ে গেছে। তবে এর ভেতর ছয় বছরই ছিলাম বাইরে বাইরে - উচ্চশিক্ষার্থে।
আমার বাবা একজন শিক্ষক ছিলেন। খুলনার এক হাই স্কুলের হেডমাস্টার। তাই শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়াটা মনে হয় প্রকৃতি প্রদত্ত।

একজন শিক্ষকের সবথেকে বড় প্রাপ্তি হতে পারে তার ছাত্রদের শ্রদ্ধা আর অকৃত্রিম ভালোবাসা।

ক'দিন আগেও যখন সিএসই সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাস মনিটর ২৫ বলল, স্যার আপনাকে ফেয়ারওয়েল দিতে চাই - আমি ভাবিনি আজ ওরা এরকম কিছু একটা করে বসবে। আমি ভাবিইনি যে ওরা পাঁচ তলা থেকে সিঁড়ির দু'পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে গার্ড অফ অনার দিবে। আমি এতটার যোগ্য নই। ওরা ছোট মানুষ - ওরা এটা বুঝে না যে আমি ওদের জন্য বাড়তি কিছুই করিনি। আমার মেধার পুরোটা দিয়ে পড়ানোটা আমার বদান্যতা বা মহানুভবতা নয় বরং সেটাই আমার কাজ আর ওদের অধিকার।
যাই হোক, ক্লাস রুমে ঢুকেই দেখি ইয়া মস্ত এক কেক। সেখানে আবার শুভকামনার while loop চলছে তো চলছেই। আমি ওদের আন্তরিকতায় মুগ্ধ, আনন্দিত ও কিছুটা স্তম্ভিতও বটে। এরাই তো ওরা না যাদের ল্যাব ক্লাসে আমি ছিলাম মোটামুটিভাবে এক আতংক (আমার মতে)। কোথাও কি ভুল হচ্ছে তবে?
না ওদের ভুল হয়নি হয়ত তবে আমার হয়েছে। ওরা যে আমাকে এতটা ভালবাসে এইটা আমি কখনই বুঝিনি। এখনও বুঝে উঠতে পারছি না। আমি কি সত্যিই এত ভালবাসার যোগ্য? I just did my job and thats it.

আজ আমি আমার পেশাগত জীবনের সবথেকে বড় উপহার পেয়েছি। ছাত্রদের কাছ থেকে সম্মান, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। অদ্ভূত একটা দিন ছিল আজ।

হয়ত এর থেকেও আরও বড় উপহার সামনে অপেক্ষা করছে। যখন দেখবো তোমরা, সিএসই'১২ এর ছেলেরা আমাকে শিক্ষায়, গুণে, মানে ছাড়িয়ে গেছ। আর তারপরও কোথাও দেখা হলে বলবে, স্যার আমি আপনার ২০১৪ সালের আইইউটি সিএসই'র এক পাগল ছাত্র - যে কি না আপনার শত বকাঝকা সত্ত্বেও আপনাকে অনেক পছন্দ করতাম। আমি অপেক্ষায় রইলাম। দেখি, ততদিন পর্যন্ত তোমাদের আইডি মনে থাকে কি না।

বাবা যখন শিক্ষকতা করতেন তখন দেখেছি প্রতি ঈদেই বাবার স্কুলের নাইন-টেনের ভাইয়ারা তাদের স্যারের বাসায় বেড়াতে আসতেন। আর তারপর সেই ছোট্ট আমি ভাইয়াদের সাথে বেড়াতে যেতাম।
আমার ১৮ দিনের পিচ্চি মেয়ে - আরইয়া'র জন্যও কি নিয়তি তা লিখে দিল?

কিছু কিছু চলে যাওয়ায় মায়া বাড়ে। আজ না গেলে আমার সিএসই'১২ এর জন্য মায়াটা বুঝতে পারতাম না মনে হয়।

দেখা আর হোক বা নাই হোক - মায়াটা থাকবে, অনেক অনেক দিন।