বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১০

আন্দালুসিয়া থেকে - ২

টেরই পেলাম না কিভাবে ৩টা দিন চলে গেল। আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, গত তিন দিনের কথা মনে করলেই কোন মূহুর্তটা চোখের সামনে ভাসে তবে আমি বলবো পাহাড়ের ঢাল ধরে কুঁজো হয়ে উপরে উঠছি যেন কোন পরমা সুন্দরী আমার জন্য চূড়ায় বসে অপেক্ষা করছে। সুন্দরী অনেকেই ছিল উপরে তবে তাদের কেউই আমার জন্য ছিল না। আমার জন্য ছিল পুরোনো, শ্যাওলা ধরা দেয়াল আর দেয়ালের ভিতরে আগের দিনের রাজা-বাদশাহদের বাগানবাড়ি আর দূর্গ। আমার কাছে দুধ থেকে ঘোল উত্তম।

২৭ ডিসেম্বরঃ
---------------------------------------------------
এখানে ভোরবেলায় কাক ডাকে কিনা জানি না, তবে আমাকে উঠতেই হল অনেক সকালে। সূর্য তখন উঠি উঠি করছে। ব্যাগপ্যাক কাঁধে আর গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে ঠিক বাস স্টপটাতে গিয়েই দাঁড়ালাম। গন্তব্য ট্রেন স্টেশন। করডোবা যাচ্ছি ট্রেনে।

মালাগা থেকে ১৫০ কিমি দূরত্ব ট্রেনে পাড়ি দিতে সময় লাগে ১ ঘন্টা ১০ মিনিট। ডাচ ট্রেনগুলোর এদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। আর এই ট্রেনে চড়ে আপনারও কিন্তু ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না। চেষ্টা করুন বসতে জানালার পাশে আর চোখ খোলা রাখুন। প্রকৃতি আপনার চোখ জুড়িয়ে দেবে। কিছু'খন পরপরই পাহাড় আর উপত্যকা ধরা দেবে জানালার পাশে। ডিসেম্বরের শেষভাগে এসেও চারদিকে অনেক সবুজ। এবার নিন, দুধের স্বাদ ঘোলে মেটান আর বলুন দুধ অপেক্ষা ঘোল উত্তম।

 
বেশ বাতাস বইছিল যখন নামি করডোবাতে। ট্রেন স্টেশনের ভিতরেই ট্যুরিসমের কাউন্টার। জেনে নিলাম বাস নম্বর যাওয়ার, করডোবার বিখ্যাত ক্যাথেড্রাল-মস্কে। মুসলিম শাসনাধীন সময়ে এর মূল নির্মাণ আর পরে খ্রিষ্টানরা কর্তৃত্ব নিয়ে সূচনা করে ক্যাথেড্রালের। সামনের চত্বর ঘিরে রয়েছে কমলা বাগান। চটপট কয়েকটা ছবি তুলে টিকিট কেটে ভিতরে এসে ঢুকলাম। সারি সারি, ক্যাথেড্রালের ছাদ ছোঁয়া কারুকর্যময় পিলার আর ততোধিক সুন্দর ক্যাথেড্রালের নকশা-খচিত ছাদ। অনেক প্যাভিলিয়ন আছে ভেতরে। ইতিহাসবিদ নই তাছাড়াও অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি বিশেষ পছন্দ নয় বিধায় আমি শুধু ছবিই তুলে গেলাম। প্রার্থনার মূল বেদীর সামনে যেয়ে চোখ ছানাবড়া। Freaking Gorgeous. একথাটাই বলে ছিলাম তখন। এরপরে আরো অনেকবারই বলেছি মনে হয়।



পুরো বর্ণনা দিয়ে ঘোলটাকে দুধ বানিয়ে দিতে চাই না। শুধু বলব, একবার ঘুরে আসুন।

ক্যাথেড্রাল থেকে বেরিয়ে গেলাম রোমানদের বানানো এক সেতু দেখতে। সেতুর মাথায় এক বিশাল টাওয়ার যেমনটা দেখতে পাওয়া যায় Age of Empires গেমে। নাম ভুলে গেছি এই প্রাচীন স্থাপত্যের। ধরে নেন টাওয়ার অফ হ্যানয়।


এই ফাঁকেই আবার বেকুব টাইপ একটা কাজ করলাম। বুড়িমতন এক মহিলা আমার দিকে ফুল বাড়িয়ে ধরল। আমি ভাবলাম, তরুণী না হোক অসুবিধা কী; আর তাছাড়া ফুল না নিলে মনে কষ্ট পাবেন। এই ভেবে যেই হাত বাড়ালাম উনি খপ করে আমার হাত ধরে ভাগ্য গণনা শুরু করে দিলেন। প্রথমেই বললেন আমি খুব বুদ্ধিমান; আমি মনে মনে বলি, "হ। খুউব বুদ্ধিমান। তাইতো এখন আমার হাত তোমার কাছে"। শুধু ভালো ভালো কথাই শুনলাম। খারাপ কিছু বলল না। পাঁচটি ইউরো খসে গেল।

করডোবার রাস্তাগুলো আমাদের পুরোনো ঢাকার রাস্তার থেকেও সরু। ঐ গলিগুলোতে আবার গাড়িও যায়। এরকম চিপা চাপায় ঘুরতে থাকলাম। খিদে মেটালাম পায়েইয়া (বাঙালী উচ্চারণঃ পায়েলা) খেয়ে। তারপর ঠিক করলাম শহরের অন্য প্রান্তে যাবো। ওলা বলে লোক থামানো শুরু করলাম। সবার এক কথা "তরেতো", মানে সোজা রাস্তায় যাও। যেতে যেতে ভাবতে থাকলাম পা দুটো খুলে হাতে নিয়ে হাঁটতে পারলে ভালো লাগতো।

অবশেষে পৌঁছলাম। এদিকে শুধুই পুরোনো চার্চ। খানিক সময় ছবি তুলে উঠে পড়লাম। এবারের গন্তব্য ট্রেন স্টেশন। ফিরতি ট্রেন ধরতে হবে। বাঁধালাম দ্বিতীয় বিপত্তি। অনেকক্ষণ ধরে ম্যাপ স্টাডি করার ফলাফল হল যেখানে দুপুরের খাবার খেয়েছিলাম সেখানেই ফেরত আসলাম। ভাগ্যিস হাতে অনেক সময় ছিল। এইবার হাঁটা বাদ আর হাঁটার মত কোন শক্তিও অবশিষ্ট ছিল না। বাসে চড়ে বসলাম।

স্টেশনে এসে দেখি যেই ট্রেনের টিকিট ছিল সেই ট্রেন আসতে এক ঘন্টা দেরি হবে। গেলাম কাউন্টারে, ২০ মিনিট পরের ট্রেনে টিকিট পরিবর্তন করে নিতে কারণ ওটা ঠিক সময়েই আসবে। কাউন্টার থেকে বলা হল চেঞ্জ করার জন্য যেই ট্রেনে করে এসেছি সেটার টিকিট লাগবে। ব্যাগের আর নিজের দেহের চিপায়-চাপায় খুঁজেও যখন পেলাম না তখন নিজেকে গালি দেওয়ার শক্তিটুকুও নেই।

প্রায় ১০ মিনিট পরে হঠাৎ করেই 'ইউরেকা, ইউরেকা' বলে লাফিয়ে উঠলাম। টিকিট রাখা ছিল জ্যাকেটের গোপন পকেটে যেটার কথা আমিই ভুলে বসে ছিলাম। টিকিট চেঞ্জ করে ঠিক সময়মতন উঠে বসলাম মালাগার ফিরতি ট্রেনে।

এখানেই শেষ নয়। ফেরার পর মালাগার শপিং মলগুলো খানিক ঘুরে যখন ঠিক করলাম এইবার বাড়ির পথ ধরি আর বাস স্টপ খুঁজে পাই না। যেগুলো পাই সেগুলো থেকে ঐদিকে কোন বাস যায় না। আমার কোন দোষ নাই। এর কারণ স্পেনের অনেক রাস্তাতেই একদিকে চলাচল। যার ফলে বাস যেদিক থেকে আসে, সেদিক থেকে নাও যেতে পারে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে পেলাম। আর সেই বাস ঘন্টায় একটা।

আপনাদের আর বসিয়ে রাখবো না আমার সাথে। আমিও এত্তকিছুর পরে অনেক ক্লান্ত। সাথে আনা নাপা খুব কাজে দিচ্ছে। মালাগার গল্পই তো শোনানো হল না। হবে আরেকদিন। আজ যাই।

--------------------
গ্রানাডা থেকে


রাত ১০টা ৩০
২৯ ডিসেম্বর

সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১০

আন্দালুসিয়া থেকে - ১

কিছুটা ঝোঁকের মাথায় এক রাতের মাঝেই সবকিছু ঠিক করে ফেললাম। কিছুটা অভিমান থেকে কী কারো প্রতি? হয়তো বা হয়তো নয়। সে যাই হোক, এখন শুনেন সেই গল্প। এই যে, তোমাকেও বলছি; শোন।

বড়দিনের ছুটিতে স্পেনের দক্ষিণভাগে যাবো। ভূমধ্যসাগরের তীর ঘেঁষা মালাগা থেকেই শুরু করবো আন্দালুসিয়া ভ্রমণ। আন্দালুসিয়া স্পেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। অষ্টম থেকে পঞ্চদশ শতকের প্রায় শেষ পর্যন্ত এই অঞ্চলের অনেকখানিই ছিল মুসলিমদের শাসনাধীন।

২৬ তারিখে যাত্রা শুরু, আইন্দহোফেন থেকে। আমি চলে এসেছিলাম এক দিন আগেই। তানবীরা আপুর একমাত্র কন্যা ও সন্তান আমাদের মেঘলা মা'র জন্মদিন পালন করতে। রাতটা আপুর বাসাতেই কাটিয়ে, সকালের ভরপেট নাস্তা আর দুপুরে বিরিয়ানী খেয়ে যখন বের হলাম তখন একটা চকচকে দুপুর চারদিকে সোনা রোদ ছড়িয়ে দিচ্ছে। সত্যি বলতে এই দেশে, এই সময় এরকম ঝলমলে দিন সোনার মতই দামী।

আমি প্রায়ই হালকা বেকুব টাইপ কাজ করি। এবারও তার ব্যত্যয় হলো না। রাস্তার যে পাশ থেকে বাসে ঊঠতে হবে সে পাশে না যেয়ে বিপরীত পাশে চলে গেলাম। অবশ্য খুব সহসাই ভুল বুঝতে পেরে আবার বাক্স-পেটরা নিয়ে ওপারে। এরপরে এয়ারপোর্টে এসে বাকি সব কাজ সহজেই হলো। ভয় ছিল ক্ষীণ মনে আবহাওয়ার কারণে। কিন্তু এমন চমৎকার একটা দিনের কারণে আকাশে উড়লাম ঠিক সময়েই ট্রান্সাভিয়ায় চড়ে।

কিছুটা ঘুম আর বাকিটা সময় টয় স্টোরি ৩ দেখতে দেখতেই পার হয়ে গেলো। পৌঁছে গেলাম মালাগায় নির্ধারিত সময়ের প্রায় ২০ মিনিট আগেই।

এয়ারপোর্টের বিপরীতেই ট্রেন স্টেশন। আমি যেই হোস্টেলে উঠেছি সেখানে ট্রেন-বাসে করেও যাওয়া যায়। আবার এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি বাসও আছে। প্রথমে ট্রেন আর বাসে করে গেলে অবশ্য হোস্টেলের খুব কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া যায়। তাই ট্রেনের টিকিট কেটে অপেক্ষা করতে লাগলাম এবং ট্রেন আসার ঠিক এক মিনিট আগে শুনতে পেলাম লাউড স্পীকারে অবশ্যই স্পেনিশ ভাষায় এক ঘোষণা। এই ক্রিয়ার বিপরীত প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখলাম লোকজন সবাই ট্রেন স্টেশন ছেড়ে বাসের দিকে হাঁটা দিল। একজনকে 'ওলা' বলে থামিয়ে ইংরেজীতে জিজ্ঞেস করে জেনে নিলাম সাময়িক কিছু সময়ের জন্য ট্রেন যাবে না ওদিকে। সুতরাং, বাসই ভরসা এখন।

বাস যেখানে নামিয়ে দিল জায়গাটার নাম 'পাসেও দেল পার্কে'। কিভাবে হোস্টেলে পৌঁছতে হবে এখান থেকে সেই নির্দেশনা আছে কিন্তু কোন ম্যাপ নেই। একজন চমৎকার ভদ্রমহিলাকে থামিয়ে প্রথমে কোন দিকে যেতে হবে জেনে নিলাম। আর তাকে দিলাম পুরোটুকু 'গ্রাসিয়াস'।

এরপরে চলতে চলতেই একসময় পেয়ে গেলাম 'পিকাসা'স কর্ণার'। এখানেই কাটবে আমার আগামী তিনটা রাত। রিসেপশনে বসা 'দিমি' রুম বুঝিয়ে দিল আর তার পাওনা টাকাও বুঝে নিল। একজনের ছোট্ট, ছিমছাম রুম। তবে শব্দ অনেক কারণ একেবারেই সদর দরজার গা ঘেঁষে বলে।

একটু হাত-মুখে পানি দিয়েই বেরিয়ে পড়লাম চারপাশটা দেখতে। দারুণ আবহাওয়া। তাপমাত্রা ১২-১৫ এর মধ্যেই হবে মনে হয়। হালকা ঝিরিঝিরি বাতাস আর তার সাথে ঝিলমিল করতে থাকা বালিকারা ভ্রমণের ক্লান্তিকে দূর করে দিল প্রায়। প্রায় লিখলাম একটা কারণে। সভ্য সমাজে প্রকাশ্যে বলা যাবে না। প্রাইভেটে আসেন, বলব; তবে এখানেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে।

হোস্টেল থেকে একেবারে কাছেই একটা ঢাল ধরে হাঁটতে হাঁটতেই চোখে পড়ল উঁচু উঁচু দেয়াল। বুঝে গেলাম এই হল 'আল-কাজাবা'। একাদশ শতাব্দীতে মুসলিম শাসকদের নির্মিত এক দুর্গ। ভিতরের ছবি ইন্টারনেটে দেখেছি। রাত হয়ে যাওয়ায় এখন আর ঢুকতে পারলাম না। দিনের বেলা কোন একদিন আসতে হবে।



আল কাজাবার পাশ দিয়ে পাহাড়ের ঢালে উঁচু-নিচু হয়ে চলে গেছে দেয়ালসহ এক লম্বা রাস্তা। আল-কাজাবাকে শত্রুদের হাত থেকে সুরক্ষিত করতেই তৎকালীন গ্রানাডার শাসক ইউসুফ বানিয়েছিলেন এই পথ যার নাম 'জিব্রালফারো'। মাঝেমাঝে থেমে বন্দী করে নিলাম পাহাড়ের উপর থেকে দেখা শহরটাকে। শুনেছি এই পথের কোন এক প্রান্তেই আছে এক বাতিঘর। আজ অতদূর যাইনি; যেতে হবে পরে একদিন।



ঘুরতে ফিরতেই দেখছিলাম অনেকগুলো দলকে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে অথবা হয়তো শুধু দু'জন আলাদা হয়ে যেয়ে আলো-আঁধারীতে বসে আছে। ছায়া পড়েনি ওদের আলাদা করে মাটিতে। আমি অন্যদিকে তাকিয়ে হেঁটে যাই আর ওরা আরও ঘন হয়ে আসে একজন অন্যজনের দিকে। পৃথিবী এক নিষ্ঠুর জায়গা।

কাল সকালে যাবো করডোবা। মালাগা থেকে দেড় ঘন্টার ট্রেন যাত্রা। ওখানেও শুনেছি আছে রোমান আর মুসলিমদের অনেক স্থাপত্য নিদর্শন। সাথে থাকুন, ঘুরে আসি চলুন কাল করডোবা থেকে।


.................................
মালাগা থেকে
রাত ১টা ২০
২৭ ডিসেম্বর, ২০১০

শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১০

চলিতে চলিতে থেমে যায় - ২

১।
যে জন্য ব্লগ লেখা - স্মৃতি ধরে রাখা, নিজের অনুভূতিগুলোকে একেবারেই রঙচঙহীন অবস্থায় তুলে রাখা আর অনেকদিন পরে কোন এক অলসবেলায় সেই লেখাগুলোর সাথেই নিজের কথা বলা; আজ ঠিক তাই করলাম।

২।
প্রায় চারমাস কেটে গেছে শেষ লিখেছিলাম। আর শেষ লেখাটা পড়ে দেখলাম ওটাও প্রায় দু'মাস বিরতি দিয়ে লেখা। বোঝা যাচ্ছে বেশ; ছাইপাশ, এলেবেলে, এলোমেলো যা লিখতাম তাও আমাকে ছেড়ে গেছে। গাণিতিক ক্রমের নিয়ম মেনে হয়ত পরের লেখাটা হবে ছয় মাস পরে। দেখা যাক ... :)

৩।
সিঙ্গাপুরে ঘুরে এলাম মাঝ দিয়ে। কনফারেন্সের পেপার সেশন বাং মেরে শহর ঘুরে বেড়ানোর মজা ঠিক ক্লাস বাং মারার মতনই। দারুণ ছিমছাম একটা শহর। ছোট্ট একটা জেলে পল্লী এখন কত উন্নত। কেন? ওরা পারলে আমরা কেন পারি না? মালয়ী, চীনা তামিল আরো নানা বর্ণের মানুষ ওখানে। ওরা যদি এতটা একতাবদ্ধ হতে পারে তবে আমরা প্রায় সবটুকুই বাঙালিরা পারি না কেন? আমার ধারণা, আমাদের রক্তের ভিতরেই একগুঁয়েমির বীজ বোনা। আমরা বোকা এবং শয়তান। আমরা ধৈর্যহীন। আমরা ব্লগে ব্লগে এসব লিখে বেড়াই কিন্তু বিনা মিটারের সিএনজি বর্জন করতে পারি না। আপনি, আমি অবশ্য বর্জন করেও কোন লাভ নেই। আমাদের মধ্যেই কোন একজন সেই সুযোগ গ্রহণ করবে। মাঝেমাঝে মনে হয়, গণতান্ত্রিক সরকার থেকে অগণতান্ত্রিক, কিছুটা দেশপ্রেমিক একনায়কতন্ত্র অনেক ভালো। সিঙ্গাপুরকেই দেখুন না!

৪।
বাংলাদেশ ঘুরে এসেছিলাম সিঙ্গাপুর থেকে। একেবারেই নীরবে। দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েই চলেছে। এই যেমন বেনসন একটা ৬ টাকা। ৭০/৮০ টাকার সিএনজি ভাড়া ১০০-১২০ টাকা ইত্যাদি ইত্যাদি। হিসাব করে দেখলাম এক মাস বাংলাদেশে থাকলেই মনে হয় ইঊরোপের চেয়ে খরচ বেশি হয়।

৫।
টরোন্টো ঘুরে আসার সুযোগ পেলাম বাংলাদেশ থেকে আসার পর পরই। দেড় বছর ধরে জ্ঞানার্জনের প্রাপ্তি এই ঘোরাঘুরি। আমি মুগ্ধ। প্রথম মুগ্ধতা পথে ঘাটের লোকের কথা আমি বুঝতে পারি। ডাচ যেহেতু জানি না, এখানে চলাফেরা করলে লোকজনের কথা কিছুই বুঝি না। ব্যাপক বিরক্তিকর। নর্থ আমেরিকায় স্বাভাবিকভাবেই এই সমস্যায় পড়তে হয় না। বেশ ঘোরাঘুরি করেছি ওখানে। টরোন্টো জু, কাসা লোমা, সিএন টাওয়ার আর নায়াগ্রা ফলস। অফ-সীজনে যাওয়ায় নায়াগ্রা ফলসের পুরো আভিজাত্য হয়ত দেখিনি তবে এই আমার কাছে ঢের। অনেকদিন মনে থাকবে টরোন্টো আর বন্ধুদের বিশেষ করে আমার আইইউটির রুমমেট সবুজ আর জুনিয়র ফারাবীর আতিথেয়তার কথা।

৬।
ব্যাক টু রিয়েলিটি। পেপার এর ডেডলাইন আছে ২২ তারিখ। কোডিং কেবল শেষ করলাম। Java, SQL আর SPARQL এর Syntax এর চোটে সবকিছুই এখন ঘোলা ঘোলা লাগছে। মেইন প্ল্যাটফর্মে এখনও Integration করা বাকি। তারপর রেজাল্ট কালেকশন। এবং পেপার লেখা ... শেষ লাইনটা অবশ্য ঠিক করে রেখেছি এখনই; Our algorithm outperforms ... এর নামই জ্ঞানার্জন।

৭।
আজকে আমাদের ডাটাবেস গ্রুপের প্রফেসরের চাকরির ২৫ বছর উদযাপিত হল। এই উপলক্ষে তার সব প্রাক্তন আর বর্তমান ছাত্রদের নিয়ে "বিশাল সমাবেশ" আর খানাপিনা ছিল। অনেকেঢ় কর্মজীবনেই তাদের আগের গবেষণার কোন সুস্পষ্ট প্রভাব নেই। এক মহিলা এসেছিলেন। তিনি এখন ৭ একর জায়গায় বাগান বাড়ি করেছেন। সারাদিন বাগান নিয়েই থাকেন। অনেকে চলে গেছেন ম্যানেজেরিয়াল লাইনে। আর খুব কমই আছেন শিক্ষকতায়। জীবনের মজা তো এটাই না? শেষটা কখনও দেখা যায় না।

৮।
গত সামারে বার্লিন বাদে আর কোথাও ঘোরা হয়নি। এখন এদিককার আবহাওয়া খুবই খারাপ। তারপরও মনে হয় ব্রাসেলসে যেতে পারি। আসল কারণ ওয়ার্কশপ আর সাথে কলাটিও বেচে আসি।

বৃহস্পতিবার, ২২ জুলাই, ২০১০

চলিতে চলিতে থেমে যায় - ১

১।
নিজেই অবাক হয়ে গেলাম। শেষ লিখেছিলাম তা প্রায় তিন মাস হতে চলল। সময় কী এতটাই দ্রুত চলে যায়? যায় হয়ত। আমাদের বয়স বেড়ে যায়। না বলা কথাগুলো মনের মাঝে প্যাঁচ খায়। তারপর, সেই কথাটা বলার প্রয়োজনই হয়ত ফুরিয়ে যায় আজীবনের জন্য। প্রয়োজন পুরোটা ফুরানোর আগেই লিখে রাখি বরং কিছু কথা আজকে। জমা থাকুক আগামীর জন্য। স্মৃতি রোমন্থনের জন্য।

২।
এই লেখার উপরের অংশটুকু গতকাল রাতে লেখা। ইদানীং একদমই লিখতে পারি না। কী-বোর্ড চলে না। এখন অফিসে বসে লিখছি। কলিগরা প্রায় সবাই ছুটিতে আর যে ক'জন আছেন, তারা এখন দুপুরের খাবার সারতে ব্যস্ত।

ইউরোপে এই সময়টায় প্রায় সব অফিস, বিশ্ববিদ্যালয়ই প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। স্টুডেন্টদের তো একেবারে ঘোষণা দিয়েই 'সামার ভ্যাকেশন'। আর বাকীরাও এই সময়টাতেও ছুটি নিয়ে এদিক-সেদিক চলে যায়। আমাদের গ্রুপের সেক্রেটারী ইডা ঘুরে আসলো ইটালী থেকে। আমাদের এক প্রফেসর, মার্টিন সেও গিয়েছিল ছুটি কাটাতে ইটালী। সিস্টেম অ্যাডমিন, ইয়ান তো রীতিমত প্রফেশনাল ট্র্যাকার আর ক্লাইম্বার। এই ছুটিতে গিয়েছিল নেপালে। কোনদিন হয়ত শুনবো ইয়ান এভারেস্ট জয় করে ফেলেছে।

৩।
মুসা ইব্রাহীম। কিছুদিন আগেও এই নামটা আমি জানতাম না। এখন জানি। সমগ্র বাংলাদেশ জানে। তবে তার এই অর্জন এখন বেশ কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই প্রশ্নকারীদের এবং মুসা, উভয় পক্ষের উপরই বিরক্ত। কারণ, আমি সত্য কোনটা বুঝতে পারছি না। তবে আপাতত আমি মুসাকে 'বেনিফিট অব ডাউট' দিয়ে রেখেছি। কারণ হল, যারা প্রশ্ন তুলেছেন মুসার এই অর্জন নিয়ে, তারা কেউই নিজ চোখে দেখে আসেননি যে মুসা ওঠেনি। সত্যটা খুব শীঘ্রি জ্বলজ্বল করে উঠুক, এটাই আমার চাওয়া।

৪।
বিশ্বকাপটা কিন্তু এবার ফুটবলে যাদের নাম প্রায় 'চোকার' হয়ে গিয়েছিল তাদের হাতেই জ্বলজ্বল করছে। ফাইনালে স্পেনের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস ছিল বলেই আমি স্পেনকে সমর্থন করিনি। ব্যাপারটা আসলে ইচ্ছাকৃতও নয়। এত এত কমলার ভীড়ে নিজেও কমলা পড়ে মনের ভিতরে আর লালকে ঠাঁই দিতে পারিনি। ডাচরা এই বিশ্বকাপে কখনই সুন্দর ফুটবল খেলেনি। খেলেছে কার্যকরী ফুটবল। ফাইনালটা জিতে গেলে হয়তবা তখন আমরা তাদের এই কার্যকরী ফুটবলেরই গুণগান গাইতাম। কারণ? শুধুমাত্র বিজয়ীরাই ইতিহাস লিখতে পারে। পরাজিতদের বীরত্বগাঁথা কেউ মনে রাখে না দু'দিন পরে।

স্পেনকে অভিনন্দন। তাদের সুন্দর ফুটবল ভবিষ্যতে আরো ফলবান (বেশি বেশি গোল) হোক এটাই প্রত্যাশা। সবচেয়ে কম গোল করে বিশ্বকাপ জয়টা স্পেনের সুন্দর ফুটবলের সাথে ঠিক যায় না বলেই আমার এই চাওয়া।

৫।
বাংলাদেশ সব টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোকে হারানোর পরে যে নিজেরাই যে সবার কাছে হেরে উল্টো রেকর্ডটাও করতে চাইবে বুঝিনি। তাহলে হয়ত বলতাম, ইংল্যান্ডকে ছেড়ে দে; আয়ারল্যান্ড আর নেদারল্যান্ডসের সাথে জিতে আয়।

বাংলাদেশের নেদারল্যান্ডসের সাথে খেলার দিন লাঞ্চ আওয়ারে ডাচ কলিগদের একথা বলছিলাম। এটাও যোগ করলাম বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলে এবং আয়োজকের মর্যাদাও পাচ্ছে খুব শীঘ্রি। আমার ডাচ কলিগরা অবশ্য পরে কেউ আর খেলার খবর জানতে চায়নি বলে বাঁচোয়া।

৬।
আমি এই সামারে ছোট ছোট ট্রিপের প্ল্যান করেছি। সেই মোতাবেক ঘুরে এলাম বার্লিন থেকে। জার্মানী সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল এখানে হয়ত দেখার মত তেমন কিছু নেই (অবশ্যই ঐতিহাসিক স্থান বাদে)। বার্লিন দেখে আমার ধারণা বেশ ভুল প্রামাণিত হয়েছে।

এক সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম 'পোটসড্যামার প্লাটজ' এ। বার্লিনের নতুন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ওখানে গিয়ে দেখলাম রঙের মেলা আর হাজার হাজার লোক। ওখানেই আছে সনির ইউরোপিয়ান হেড কোয়ার্টার। আছে আইম্যাক্স আর অসংখ্য সুসজ্জিত রেস্টুরেন্ট। একটা ছবি দিয়ে যাই এবেলা। পরে আরও আসবে।
পোটসড্যামার প্লাটজ


বার্লিনে গেলে অবশ্যই রাত নামলে পরে ঘুরে আসবেন 'পোটসড্যামার প্লাটজ'। ওখান থেকে কাছেই রাইসট্যাগ (জার্মান পার্লামেন্ট) আর ব্রান্ডেনবুর্গ গেট। ওদুটোও রাতেই স্বমহিমায় ধরা দেবে আপনার কাছে। তবে রাত দশটার পরে গেলে আমাদের মত দূর থেকেই রাইসট্যাগের ছবি তুলতে হবে।
রাইসট্যাগ (জার্মান পার্লামেন্ট)

ব্রান্ডেনবুর্গ গেট

৭।
লিখতে লিখতে দেখি অনেক লিখে ফেলেছি। এবার থামতে হয়। কোডিং এর কাজ বাকী। কোডিং করে ইদানীং মজা পাচ্ছি। এক মাস্টার্স স্টুডেন্ট এর কোড করা একটা Data Stream Processing Engine আমাকে আরো একটু আপ্রগ্রেড করতে হচ্ছে আমার নিজের রিসার্চের Prototype এর জন্যই। প্রথম দিকে বেশ বেগ পেয়েছিলাম কোড Re-engineering করতে যেয়ে। তবে এখন বেশ আয়ত্ত্বে চলে এসেছে।

পিএইচডি পাওয়ার পূর্বশর্ত পাবলিকেশনস। রানের খাতা খুলতে পেরেছি এই ভেবে বেশ ভালোই লাগছে।

মাস দুয়েক পরে কী তবে দেখা হবে আপনার সাথে? সিঙ্গাপুরে?

রবিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১০

এমনিই ...

০১।
অনেকদিন পরে লিখতে বসেছি। অবাক হয়ে খেয়াল করলাম শেষ লিখেছিলাম প্রায় ৫০ দিন আগে। খুব দ্রুত চলে গেল সময়টা। মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা খুব ছোট। তিন ভাগের এক ভাগ সময় তো ঘুমিয়েই কাটাই। আর কীইবা বাকি থাকলো, তাহলে?

০২।
তারপর ও এই অল্প সময়েই তো কত্ত কত্ত ঘটনা ঘটে যায়। বাংলাদেশ থেকে ঘুরে আসার পরে জানুয়ারী মাসের প্রথম দুটো সপ্তাহ খুব অস্থিরতার ভিতর দিয়ে গিয়েছিলাম। পড়াশোনার ব্যস্ততা আর অন্য কোন এক কারণে সেই অস্থিরতা কেটে যায় একসময়। খুব ভালো কিছু সময় যায় মাঝে। সেই সাথে সাথে বিদঘুটে পড়াশোনা জিনিসটাও আছে। আর এখন?

০৩।
আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করে দেখলাম, আমি যখন বেশ স্থির থাকি তখন লিখতে ইচ্ছে হয় না। তাই আমার লেখাগুলো ঐ অস্থির সময়গুলোই ধরে রাখে মনে হয়। অবশ্য এটাও মন্দ নয়। মানসিক অবস্থার ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তনটা তো এই সময়ই সবচেয়ে বেশি হয়। সময়টা তোলা থাকুক এখানে।

০৪।
আজ এখানে আবহাওয়া বেশ চমৎকার। বাতাস আছে, তবে তা খুবই মিহি বাতাস। শরীর জুড়িয়ে দেয়। আজ রাতে খাওয়ার পরে হেঁটে আসলাম বেশ অনেকদূর। ভালো লাগলো।

০৫।
এখন আর লিখব না।

বৃহস্পতিবার, ৪ মার্চ, ২০১০

খবরদার, পইড়েন না।

সময়ের কোন নড়ন চড়ন নাই। ক্যাম্নে কী? বুঝবার পারতাছি না।
কাইল রাতে ঘুমাই নাই। পিএইচডির ঠ্যালা ঠেলছি সারা রাইত ধইরা। ডেডলাইন ছিল একটা আগামী রবিবারে। বিশেষ এক কারণে ঠিক কইরা ফেললাম আজকেই "বিড়াল মারুম"। সকাল সাতটার সময় ঠাণ্ডার মধ্যে যখন বাড়ির দিকে রওনা দেই তহন বিড়াল মরছে কী না জানি না তয় আমার ব্যাপক ঠ্যাং ব্যথা শুরু হইছিল।

এখন করতাছে চোখ ব্যথা। ঘুম হইছে সকালে ঘন্টা তিনেক। তারপর লাঞ্চ কইরা ইউনি আইসা বসতে না বসতেই মেইলবক্স খুইলা দেখি প্রফেসরের ক্যালায়িত মেইল। ডেডলাইন পিছাইছে এক সপ্তা। সে বিয়াপক খুশি। ব্যাটা আমার চেয়েও ফাঁকিবাজ। ড্রাফট লিখা পড়তে দিলে সে শুধু জানি কেমন কেমন করে। হালারে পাইয়া লই একদিন।

যে কথা কইতে ছিলাম। চোখ ব্যথায় কাবু হয়ে ক্যাপাচ্চিনো পান করতে করতে দিলাম এক ঢাকাবাসী বন্ধুরে [না কী বান্ধবী? ;)] ফোন। সে দেখি মহা আরাম কইরা ঘুমায়। যদিও তখন তারে ভদ্র কইরাই বললাম "আচ্ছা, ঘুমাও"; মনে মনে ব্যাপক হিংসা দিছি। আমি তো ঘুমাইতে পারতাছি না।

আইজ অফিসে আসছি সাড়ে বারোটার পরে। মনে হইতেছে অনেকক্ষণ ধইরাই এই চেয়ারটায় বইসা আছি। চেয়ার থেইকা উঠছি কিছুক্ষণ আগেও। অফিসে আইছি হইছে মোটে আড়াই ঘন্টা। একটা পেজ পড়ছি শুধু। হইলটা কী? সময় থাইমা গেল না কী? পৃথিবীর ব্যাটারী কি শেষ?

তয় আমার ব্যাটারী শেষ করার ব্যাপক পরিকল্পনা করছি এইবার। যদি সফল হই, তাহলে পৃথিবীর বুকে আমার নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবো একজন কিংবদন্তী প্রেমিক হিসেবে আর যদি ব্যর্থ হই তাইলে তো আবার সেই লুপে পরুম। হায় হায়। নাহ, সে বেশ চলনসই ... :)

এইগুলা কী লিখলাম? এই লেখার লিংক তো দেওয়াই যাইবো না। লুকজন মাইর দিবো সোজা তাগো টাইম লস করানোর জন্য। অনেকটা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলা দেখার মতন। :(

মঙ্গলবার, ২ মার্চ, ২০১০

শিরোনামহীন কিছু কথা

বুড়ো হয়ে যাচ্ছি দিনকে দিন। একেবারে প্রথম জন্মদিনে বাবা-মার সাথে তোলা ছবিটা এবারও বাসায় যেয়ে দেখে এসেছিলাম। নীল রংয়ের পাঞ্জাবী পড়া ছিলাম। মার কাছে শোনা, ওটাই নাকি ছিল আমার প্রথম পাঞ্জাবী। তারপর আরো কত সহস্র দিন চলে গেল। অনেক ঘটনা, অনেক হাসি, অনেক কান্না। মাঝে মাঝে ভাবি, জীবনের শেষটা কেমন হবে?

অতদূর চিন্তা আমার ক্ষুদ্র মাথায় আমি করতে পারিনা। আগামী এক বছর আমি কি করব, কিভাবে থাকবো সেটাই আমার কাছে ধোঁয়াশা। আর আমি দেখেছি যখন কোন চিন্তা-ভাবনা করি ভবিষ্যতের, হয় পুরো উলটো। তাই এখন আমি অনেক চালাক। সুখচিন্তা করা ছেড়ে দিয়েছি। তাও মাঝেমাঝে স্বপ্নরা হানা দেয় জীবনের উঠোনে। দরজা খুলে আমি বেরুতে না বেরুতেই তারা দৌড়ে পালায়।

এই জীবনটাতে অনেক কিছুই দেখেছি। কিভাবে মানুষ মানুষের কাছে আসে, তারাই আবার স্বার্থপরের মতন খুবই আশ্চর্যজনকভাবে সব কিছু ভুলেও যেতে পারে। দেখেছি, সবচেয়ে প্রিয়জনকে ভুলেও কিভাবে দিব্যি জীবন কাটিয়ে দেয়া যায়। দুঃখগুলো, কষ্টগুলো কীভাবে ভুলে থাকা যায় তাও জানি আমি। আবার দেখেছি একেবারেই অপ্রত্যাশিতভাবে জীবনের কোন এক বাঁকে নিজের উপস্থিতি টের পাওয়া। হয়ত বাঁকের একদিকে নিরবিচ্ছিন্ন সুখ আর ভালোবাসা; আর অন্যপ্রান্তে একাকীত্ব আর হতাশা। আর সবচেয়ে অসহায় লাগে একজন মানুষের তখনই বোধহয় যখন সে বোঝে তার জীবনের চাবি অন্য একজনের কাছে। এই পৃথিবীর আর কোনও জীব কি মানুষের মতন একই ভুল এরকম বারে বারে করে?

কোন গল্পের বই যখন হাতে নিতাম তখন বেশি উত্তেজনার বশে আগে শেষটা পড়ে নিতাম। অথবা হয়তবা খুব বিরক্তিকর লাগলেও। আমার জীবনটা এখন কিরকম বুঝতে পারছি না তবে পড়ে নিতে ইচ্ছে করছে আমার গল্পের শেষ অধ্যায়গুলো।

নিজেকে হয়ত প্রস্তুত করতে পারতাম অনিবার্য পরিণতির জন্য।

শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১০

... I wanna grow up once again ...

মাঝে দিয়ে পুরো একটা সপ্তাহ চলে গেল। শখের জ্বরে পড়েছিলাম, বরফ আর ঠাণ্ডা বাতাসের সাথে সখ্যতা একটু বেশি করে। ডাচ ভাষা শিক্ষা কোর্স চলছিল। শেষ হল। উচ্চারণে অনেক সমস্যা। অল্প কিছু শব্দ অবশ্য শিখেছি। আর সবচেয়ে কষ্টকর কাজটা আবার শুরু করতে হল; রিসার্চ। এই কাজটা করতে আমার কোন মন নেই।

নতুন লেন্স হাতে পেয়েই ছবি তোলার জন্য হাত সুড়সুড় করছিল। নিক্কর ৫৫-২০০ মিমি ভি আর। কেনার আগে বেশ দ্বিধাদ্বন্দে ছিলাম ৭০-৩০০ আর এটা নিয়ে। ৭০-৩০০ মিমি এর দাম এটার দ্বিগুণেরও বেশি। পারতাম হয়ত কিনে ফেলতে। তারপরও শেষ মুহুর্তে কিছুটা কৃচ্ছতা সাধন করলাম। হয়ত বাড়তি যে টাকাটা লাগতো সেটা হঠাৎ করে দেশে গেলে কাজে দিতে পারে। আর তারপর লেন্স হাতে পাওয়ার ৪/৫ দিন পরে বের হলাম ছবি তুলতে। এফবিতে তুলে দিয়েছি আগেই, অল্প ক'টা এখানেও। অনেকক্ষণ ঠাণ্ডার মধ্যে বাইরে ছিলাম ঐদিন। ফলাফল হাতে নাতেই পেয়ে গিয়েছিলাম। এফবিতে ছোট্ট করে 'জ্বর' লিখে দিলাম। এখানে আইণ্ডহোভেনে রিমি আপুর বাসার দাওয়াতে যেতে পারলাম না। কত্ত মজার মজার খাবার থেকে বঞ্চিত হলাম। তবে তার বদলে অবশ্য কিছু পেয়েছিলাম। কী? ... নাহ, এখানে বলা যাবে না। কানে কানে বলবো।

 

ডাচ ভাষার কোর্স শেষ হল। দু'টো পরীক্ষা ছিল। সম্মানের সাথে উৎরে গিয়েছি। আমাদের গ্রুপের সেক্রেটারী ইডা আর আমার রুমমেট রবিন এখন প্রতিদিন ৫ মিনিট করে আমার সাথে ডাচ বলে। অল্প কিছু কথা বুঝতে পারি, তবে বলতে হবে ধীরে ধীরে। আর নিজের উচ্চারণ নিয়ে অনেক বড় বিপদে আছি। রবিনের সাথে কথা বলার সময় প্রথমে বলি আর তারপরে লিখি দেই। তারপর রবিন বুঝতে পারে কী বলছি। ডাচ ভাষা বলা বড়ই কঠিন; আর তার থেকেও কঠিন নারীদের মন ভজানো। তবে আমার এবারের মিশন, "আমি চিরতরে দূরে সরে যাবো, তবু আমারে দেব না ভুলিতে" টাইপ। দোয়াপ্রার্থী।

একটা জিনিস ঠিক করে ফেলেছি। সামনের জুনে আমার "ফার্স্ট ইয়ার অ্যাসেসমেন্ট" হবে। ঐ সময় সিদ্ধান্ত নিব, আমি সত্যিই পিএইচডির পিছনে লেগে থাকবো কী না? যদি ছেড়ে দেই তবে আর কখনোই ওমুখো হব না। আর না হলে লেগে থাকবো শেষতক। দেখা যাক, কী হয়?

বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ ইচ্ছা করে কমিয়ে দিয়েছি আপাতত। কেন? বলতে পারবো না। হয়তো আবার পুরোদমে ওদেরকে বিরক্ত করবো বলে আটঘাট বেঁধে নামছি বলে। বন্ধুরা ভুলে যাস না। আমি আছি, এখানেই। আর চিন্তা করছি। কী? ইস্টারের ছুটির সাথে আর ক'টা দিন নিয়ে ঘুরে আসব কোথাও থেকে। জায়গাটা কই? হতেও পারে ... বাংলাদেশ।

দু'দিন আগে মন খারাপ ছিল বকরের মৃত্যুতে আর হামীমের দুর্ঘটনায়। একটা প্রশ্ন মাথায় আসে। খুবই গরীব পরিবারের সন্তান বকরেরই কেন এরকম পরিণতি হতে হল? সৃষ্টিকর্তা কী বুঝতে পারেননি ওকে হারিয়ে ওর পরিবারের কী অবস্থা হতে পারে? না কী তিনি অন্ধ? আমাকে কে কেউ বলতে পারবেন কোন ভালোটা এর মধ্যে নিহিত আছে? এরকম নিষ্ঠুর একজন স্রষ্টার সৃষ্টি আমি। ধিক আমাকে।

ধিক আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়াকেও। রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়াটাই আপনার কাজ। এরকম ক'টা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটার পর আপনাদের টনক নড়বে? আর যদি নাই নড়ে তাহলে কিন্তু আপনাদের গদিটাও নড়ে যেতে পারে। হ্যা, ওটাও হতে পারে একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আরও দায়িত্বশীল আচরণ আপনার কাছ থেকে আমরা প্রত্যাশা করি।

আর আমাদেরও দোষ আছে। এই খবরটি পড়ুন। আমরা নিজেরাই যদি সচেতন না হই, তাহলে হামিম আর সুমির মতন অনেক প্রাণই অকালে ঝরে যাবে। আমরা কি পারি না, একটু কষ্ট করে ফুট ওভার ব্রীজ বা জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করতে? আমার এক বন্ধুই গতকাল বলছিল, ওর ওভার ব্রীজ অনেক উঁচু লাগে তাই উঠে না। ওকে তখন বলিনি, তোমার কোন অঘটন হলে, তুমি বেঁচে যাবে আর তোমার চারপাশের অনেকগুলো মানুষকে দিয়ে যাবে এক বোঝা কষ্ট। বন্ধুটা আমার যেন এরপর থেকে একটু সতর্ক হয়।

২০টি সোনার টার্গেট ছিল। এ পর্যন্ত পেলাম ৫টি। ফুটবল আর ক্রিকেটের ফাইনালে। হকিতে ভারতের সাথে ৩-৩ গোলে ড্র। একেবারেই খারাপ আমি বলব না। ছোটবেলায় রাত জেগে প্রতিদিন হাইলাইটস দেখতাম। এখনও দেখতে ইচ্ছা করে। উপায় নাই গোলাম হোসেন। আরও কত কিছু করতে ইচ্ছা করে। হঠাৎ হঠাৎ কাউকে চমকে দিতে ইচ্ছে করে। হুট করে দেশে চলে যেতে ইচ্ছে করে। প্রিয় মুখগুলো দেখে আসতে ইচ্ছে করে। বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই কিছু জমানো কথা বলে আসতে ইচ্ছা করে। এরকম কত শত টুকরো টুকরো ইচ্ছা। কোন কোনটা পূরণ করা হয়ে উঠবে আর কোনটা কখনই নয়। ইচ্ছেগুলো একসময় মরে যাবে অপর্যাপ্ত পরিচর্যায়।

আজকে উইকেণ্ডের শুরু। শনিবার সকাল। অনেক ভোরে উঠেছি। প্রায় ৬ টার দিকে। একটা গানই কেবল শুনে যাচ্ছি এখন। আমার প্রিয় একটা গান

তুমিও একবার শুনে নিও।।

শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১০

আকাশ মেঘে ঢাকা, বরফ কণা ঝরে

১: আজকের সকাল
ক্লাসে ঢুকতেই ইঙ্গে (আমাদের শিক্ষিকা) ডাচে কি যেন বললেন। সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম। পরে উনিই তর্জমা করলেন ইংরেজীতে। আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল heel goed (খুব ভালো)। আজকে লাঞ্চের পর আর ক্লাস হবে না। অফিসে আর কে যায়? বাসায় এসে ফেসবুকে পোংটামি করা শেষে ভাবলাম একটু লিখি।


২: অনেকদিনের চাওয়া পূর্ণ হল
এনটিভির রিপোর্টারের গলা শুনতে পাচ্ছিলাম; স্পষ্ট নয়। কারণ আমি তখন টেলিফোনের ওপাশে। ২৭ তারিখ দিবাগত রাতের কথা বলছি। ততক্ষণে দু'জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। জন্মেছি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার ৭ বছর পরে। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আর ৭৫ পরবর্তী সময়ে তাকেও বেশ রাজনৈতিক হয়রানির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তাই বঙ্গবন্ধুকে জানার হাতখড়ি বাবার কাছেই। আমার মতে, উনি অনেক বড় মাপের নেতা কিন্তু ততটা সফল রাষ্ট্রনায়ক নন। কেন নন এই বিতর্কে যাওয়ার মত এলেম আমার নেই। সে যাই হোক, এরকম নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সম্পূর্ণ বিচার বিভাগীয় তদন্তের মধ্য দিয়ে রায় পাওয়া এবং কার্যকর করা অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য একটা মাইলফলক হিসেবেই বিবেচিত হবে। সেই চিন্তা চেতনা সমুন্নত রেখেই অন্যান্য সকল রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ও একই সাথে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া জরুরী। তবেই প্রধানমন্ত্রির দেওয়া বক্তব্য সার্থকতা পাবে, দেশ সত্যিই এগিয়ে যাবে।

আমার ধারণা আমি কখনই ঘোরতর আওয়ামীপন্থী নই। বরং সমমনা কাউকে পেলে সমালোচনাই বেশি করি যদিও বিপরীত চিন্তার লোকদের কাছে আমার প্রকাশভঙ্গীটা হয় "বিচার মানি কিন্তু তালগাছ আমার" টাইপের। ক্ষমতাসীন সরকারে কাছে প্রত্যাশা একটাই তাঁরা যেন দেশের মানুষের কথা একটু হলেও ভাবেন। ১০ টাকা পেলে যেন পুরোটাই নিজেদের পকেটে না পুরে ৫ টাকা অন্তত দেশের স্বার্থে ব্যয় করেন। ওনারা কী শুনবেন আমাদের এই কথাটা? না কী আগেই কানে তুলো গুঁজে বসে আছেন?

৩: নিজের ছায়ার পিছে ঘুরে ঘুরে মরি মিছে
দেশের কথা, যাদেরকে পিছনে ফেলে রেখে এসেছি, তাঁদের কথা সবসময়ই মনে হয়। আমি সঙ্গপ্রিয় মানুষ এবং আমার ধারণা আমার সঙ্গও অনেকের কাছেই বেশ কাঙ্ক্ষিত ... :P। ইদানীং কাজের সময়টুকু বাদ দিয়ে পুরোটা সময়ই ঘরে বসে থাকতে হয় Slecht Weer এর জন্য। বুঝলেন না তো? বুঝিয়ে বলছি একটু পরই। কোন বন্ধুর সাথে কথা বললে বা ফেসবুকে ফাজলামি করলে পরে সময়টা খারাপ যায় না। কিন্তু যখন কাউকেই পাওয়া যায় না, তখন? আমার তো এমন কেউ নেই, যে আমার পথ পানে চেয়ে আছে। আবার এমন অনেকেও আছেন যারা না চাইতেও অন্য কেউ তাঁদের অপেক্ষায়। অবিচার নয় কী? না কী সেই চাওয়া আর পাওয়ার মধ্যের পুরোনো টানাপোড়েন? মাঝেমাঝে নিজেই নিজেকে দেখার চেষ্টা করি ৫ বছরের পরের আমি কে। দেশের মাটিতে নাকি তুষারপাত এর মধ্যে বাইক চালিয়ে অফিসে যাচ্ছি? হাতটা কী তখনও বাড়ানো থাকবে বা হয়তো কেউ এসে ধরবেন খুব শক্ত করে, ছেড়ে যাবেন না কখনও অথবা আমি নিজেই হাতজোড়া প্যান্টের পকেটে গুঁজে রাখবো প্রত্যাখিত হতে ভয় ও কষ্ট দু'টোই পাই বলে। আগে থেকে জেনে গেলে জানি কোন মজা নেই, তারপরও আমার ধারণা মানুষ কখনই পুরোপুরি অনিশ্চয়তার মাঝে নিজেকে খুঁজে পেতে চায় না। একটু দূরে হলেও বাতিঘর থাকতে হয় পথটা দেখানোর জন্য। যাদের আলো আছে হাত ধরাধরি করে তাঁদেরকে ইদানীং বড্ড হিংসা করি।

নিজেকে কবে অন্যের হিংসার পাত্র হিসেবে দেখবো তা মনে হয় উপরে বসে যিনি মজা দেখছেন তিনি নিজেও জানেন না। পুরো পৃথিবীটাই তো তাঁর পরীক্ষাগার আর আমরা সেই গিনিপিগ। কিন্তু গিনিপিগের ও তো ছোট্ট একটা হৃদয় থাকে। ওটা উনিও বুঝেন না আর ওনার সৃষ্টিরাও মাঝে মাঝে অবুঝ হন। তাহলে, উপায় কি? লাগে রাহো ... :D

৪: Ik leer Nederlands.
মানে হল ডাচ ভাষা শিখছি। একেবারেই বিগিনারদের জন্য। ৬ দিন ক্লাস, প্রতিদিন ৬ ঘন্টা করে। শব্দ মনে থাকলেও উচ্চারণ করাটা আমার জন্য রীতিমতন হিমালয় পাড়ি দেওয়ার মতন। এক 'উ' শব্দটাই আছে বেশ কয়েকটা। কোন কোনটা বাতাস ছেড়ে দিয়ে। আবার কোনটা বাতাস ধরে রেখে। আর ডাচ শব্দগুলোও আকারে ডাচ লোকজনের মতই। ইয়া বড় বড়। আরো আছে 'খকখক' সাউণ্ড। সব মিলিয়ে যা শিখছি তা কিছুক্ষণের মধ্যেই জগাখিচুরি পাকিয়ে যাচ্ছে। বাই দ্য ওয়ে, Slecht Weer মানে হল খারাপ আবহাওয়া। বিশেষ করে আজ সকাল হতেই বেশ তুষারপাত। বাইকে করে যাওয়ার সময় দু'বার প্রায় পড়ে গিয়েছিলাম। সামনে কোন মেয়ে থাকলে অবশ্যই পড়ে যেতাম। ছিল না বলে রক্ষা। এক বন্ধুকে বলছিলাম এ কথা। সাইকেল চালানো নিয়ে আরো অনেক মজার কথা আছে। সচিত্র প্রতিবেদন দেওয়া যাবে পরে কোন এক সময়। এখন বরফে ঢাকা কিছু ছবি দেখেন আমার ক্যাম্পাসের (আইফোনে তোলা বলে মান একটু খারাপ)। আকাশটাই শুধু ছিল মেঘে ঢাকা; তোমার দু'ফুটের মধ্যে যাওয়ার সৌভাগ্য এখনও হয়নি আর শাওন ধারাটাও ছিল না তখন।

 

 





৫: টুকরো কিছু
বাংলাদেশ আরও একবার হতাশ করলো। আমি ওদের সামর্থ অনুযায়ী ভেবেছিলাম অন্তত চতুর্থ দিনের শেষ সেশন পর্যন্ত হয়ত ব্যাট করতে পারবে। ভারতের সামনে লক্ষ্য হবে এক দেড়শ রান। না, আমি ভুল ভেবেছিলাম। যা ঘটল তা হল 'জহির'। এই ঝড়টার নামতো জহির ই দেয়া যেতে পারে, না কী?

ইদানীং নিজের রান্না আর একেবারেই মুখে দিতে পারছি না। মনে হয় একজন রান্নার লোক দরকার ... :P

এই মুহুর্তে ভীষণ কষ্ট আর রাগ লাগছে? কেন তা বলা যাবে না। গোপনীয়।

এবং ক্ষুধাও লেগেছে। সুতরাং, এই গানটা শুনতে থাকেন আর আমি বিদায় নেই ... ... ...

---------------------------------
Twee over half drie
29 Januari, 2010
Uit Enschede

মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১০

নিজের একটা জায়গা দরকার

অনেক আগেই খুলে ছিলাম এই ব্লগস্পটটা। উৎসাহদাতার ভূমিকায় ছিল শাহান; আমার ছাত্র, পরবর্তীকালে কলিগ এবং তারপর অনেক ভালো আর কাছের বন্ধু। আমার বন্ধু ভাগ্য বরাবরই ভালো। আসবে তাদের কথা একে একে।

সেইসময় আমি ছিলাম একটু অন্যরকম মানুষ। প্রায় দেড় বছরের ব্যবধানে আমার জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। আর তাইতো এখন কিছুটা সময় পড়ে থাকে অনাদরে, অবহেলায়। তাদেরকে কুড়িয়ে নিলাম আজ। ভাবলাম তবে হোক না ওদের একটু ব্যবহার। আর কিছুদিন ধরেই কেন জানি না একেবারেই নিজের একটু জায়গার প্রয়োজন বোধ করছিলাম। যেখানে আমার অনেক বেশি ভেবে লিখতে হবে না, আমার অনুভূতিগুলোতে একেবারেই ছুরি-কাঁচি চালানোর দরকার হবে না। আমি আমার মতন করে বকব, বলব।

অস্থির মানুষ আমি। তাইতো অফিসে বসেই শুরু করে দিলাম। এই জায়গাটা হবে একেবারেই আমার মতন। এইখানে থাকবে আমার প্রিয় মানুষগুলোর কথা, আমার কথা আরও অন্য অনেকের কথা। থাকবে অনেক ছোট্ট ছোট্ট অনুভূতি আমার। জীবনের শেষে এসে উল্টে যাবো এই ই-ডায়েরীর পাতা। নিজেকে দেখতে পাবো, আরো দেখতে পাবো আমার আশেপাশের প্রিয়-অপ্রিয় মানুষগুলোকে। কখনও আমার ঠোঁটে ফুটবে এক চিলতে হাসি বা কখনও মৃদু ভ্রুকুঞ্চন অথবা চোয়ালগুলো হয়ে উঠবে শক্ত। সময়টাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য আপাতত এর চেয়ে ভালো কোন কিছুর কথা আর মনে পড়ছে না।

এই যেমন ধরুন না আজকের দিনটার কথা। সকালে বাসা থেকে বেরোনোর আগেই দেখলাম চমৎকার রোদ। অফিসে এসে বুঝলাম মুদ্রার সবসময়ই উল্টোপিঠও থাকে। বাইরে ছিল ভয়ংকর বাতাস। হাত-পা প্রায় অবশ। হয়ে গেল কয়েক দফা চা আর সেই সাথে সাথে দিন শুরুর রুটিন কাজগুলি; ফেসবুকিং, মেইল চেক, পেপার পড়া ইত্যাদি ইত্যাদি।

খুব মনটা খারাপ হল বাংলাদেশের খেলার শেষভাগের লাইভ আপডেটটা দেখে। ঘুম থেকে যখন উঠি বাংলাদেশে তখন বিকাল তিনটার মত। দলের রান ১৬০-১৭০ আর তামিমেরই ১২০ এরও বেশি। খুব মজা পেয়েছিলাম। কিন্তু দিনের শেষ ওভারের আগের ওভারটাতে আউট হয়ে গেল। আবার হতাশায় পুড়লাম। এত কাছে এসে যদি ফিরে যেতে হয় তবে তা বুকের মাঝে অনেকক্ষণ চেঁপে বসে থাকে।

এরকম একটা কিছুই চেঁপে বসেছিল গতরাতে। আজকে সকালে উঠে ভাবলাম ... ধূর, জীবন তো একটাই। কী হবে এতকিছু চিন্তা করে? চলুক না, যেমন চলছে। আর ভেবেচিন্তে কাজ করতে গেলেই আমার গুবলেট হয়ে যায় বেশি।

খুব মজা পাচ্ছি এখানে লিখে। নিজের জন্য লিখছি বলেই আরো ভালো লাগছে। আরো লিখবো।
এখন থাক।

---------------------
বিকাল ৪টা ৫৫
জানুয়ারী ২৬, ২০১০
এন্সকেডে থেকে