বৃহস্পতিবার, ২২ জুলাই, ২০১০

চলিতে চলিতে থেমে যায় - ১

১।
নিজেই অবাক হয়ে গেলাম। শেষ লিখেছিলাম তা প্রায় তিন মাস হতে চলল। সময় কী এতটাই দ্রুত চলে যায়? যায় হয়ত। আমাদের বয়স বেড়ে যায়। না বলা কথাগুলো মনের মাঝে প্যাঁচ খায়। তারপর, সেই কথাটা বলার প্রয়োজনই হয়ত ফুরিয়ে যায় আজীবনের জন্য। প্রয়োজন পুরোটা ফুরানোর আগেই লিখে রাখি বরং কিছু কথা আজকে। জমা থাকুক আগামীর জন্য। স্মৃতি রোমন্থনের জন্য।

২।
এই লেখার উপরের অংশটুকু গতকাল রাতে লেখা। ইদানীং একদমই লিখতে পারি না। কী-বোর্ড চলে না। এখন অফিসে বসে লিখছি। কলিগরা প্রায় সবাই ছুটিতে আর যে ক'জন আছেন, তারা এখন দুপুরের খাবার সারতে ব্যস্ত।

ইউরোপে এই সময়টায় প্রায় সব অফিস, বিশ্ববিদ্যালয়ই প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। স্টুডেন্টদের তো একেবারে ঘোষণা দিয়েই 'সামার ভ্যাকেশন'। আর বাকীরাও এই সময়টাতেও ছুটি নিয়ে এদিক-সেদিক চলে যায়। আমাদের গ্রুপের সেক্রেটারী ইডা ঘুরে আসলো ইটালী থেকে। আমাদের এক প্রফেসর, মার্টিন সেও গিয়েছিল ছুটি কাটাতে ইটালী। সিস্টেম অ্যাডমিন, ইয়ান তো রীতিমত প্রফেশনাল ট্র্যাকার আর ক্লাইম্বার। এই ছুটিতে গিয়েছিল নেপালে। কোনদিন হয়ত শুনবো ইয়ান এভারেস্ট জয় করে ফেলেছে।

৩।
মুসা ইব্রাহীম। কিছুদিন আগেও এই নামটা আমি জানতাম না। এখন জানি। সমগ্র বাংলাদেশ জানে। তবে তার এই অর্জন এখন বেশ কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই প্রশ্নকারীদের এবং মুসা, উভয় পক্ষের উপরই বিরক্ত। কারণ, আমি সত্য কোনটা বুঝতে পারছি না। তবে আপাতত আমি মুসাকে 'বেনিফিট অব ডাউট' দিয়ে রেখেছি। কারণ হল, যারা প্রশ্ন তুলেছেন মুসার এই অর্জন নিয়ে, তারা কেউই নিজ চোখে দেখে আসেননি যে মুসা ওঠেনি। সত্যটা খুব শীঘ্রি জ্বলজ্বল করে উঠুক, এটাই আমার চাওয়া।

৪।
বিশ্বকাপটা কিন্তু এবার ফুটবলে যাদের নাম প্রায় 'চোকার' হয়ে গিয়েছিল তাদের হাতেই জ্বলজ্বল করছে। ফাইনালে স্পেনের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস ছিল বলেই আমি স্পেনকে সমর্থন করিনি। ব্যাপারটা আসলে ইচ্ছাকৃতও নয়। এত এত কমলার ভীড়ে নিজেও কমলা পড়ে মনের ভিতরে আর লালকে ঠাঁই দিতে পারিনি। ডাচরা এই বিশ্বকাপে কখনই সুন্দর ফুটবল খেলেনি। খেলেছে কার্যকরী ফুটবল। ফাইনালটা জিতে গেলে হয়তবা তখন আমরা তাদের এই কার্যকরী ফুটবলেরই গুণগান গাইতাম। কারণ? শুধুমাত্র বিজয়ীরাই ইতিহাস লিখতে পারে। পরাজিতদের বীরত্বগাঁথা কেউ মনে রাখে না দু'দিন পরে।

স্পেনকে অভিনন্দন। তাদের সুন্দর ফুটবল ভবিষ্যতে আরো ফলবান (বেশি বেশি গোল) হোক এটাই প্রত্যাশা। সবচেয়ে কম গোল করে বিশ্বকাপ জয়টা স্পেনের সুন্দর ফুটবলের সাথে ঠিক যায় না বলেই আমার এই চাওয়া।

৫।
বাংলাদেশ সব টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোকে হারানোর পরে যে নিজেরাই যে সবার কাছে হেরে উল্টো রেকর্ডটাও করতে চাইবে বুঝিনি। তাহলে হয়ত বলতাম, ইংল্যান্ডকে ছেড়ে দে; আয়ারল্যান্ড আর নেদারল্যান্ডসের সাথে জিতে আয়।

বাংলাদেশের নেদারল্যান্ডসের সাথে খেলার দিন লাঞ্চ আওয়ারে ডাচ কলিগদের একথা বলছিলাম। এটাও যোগ করলাম বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলে এবং আয়োজকের মর্যাদাও পাচ্ছে খুব শীঘ্রি। আমার ডাচ কলিগরা অবশ্য পরে কেউ আর খেলার খবর জানতে চায়নি বলে বাঁচোয়া।

৬।
আমি এই সামারে ছোট ছোট ট্রিপের প্ল্যান করেছি। সেই মোতাবেক ঘুরে এলাম বার্লিন থেকে। জার্মানী সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল এখানে হয়ত দেখার মত তেমন কিছু নেই (অবশ্যই ঐতিহাসিক স্থান বাদে)। বার্লিন দেখে আমার ধারণা বেশ ভুল প্রামাণিত হয়েছে।

এক সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম 'পোটসড্যামার প্লাটজ' এ। বার্লিনের নতুন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ওখানে গিয়ে দেখলাম রঙের মেলা আর হাজার হাজার লোক। ওখানেই আছে সনির ইউরোপিয়ান হেড কোয়ার্টার। আছে আইম্যাক্স আর অসংখ্য সুসজ্জিত রেস্টুরেন্ট। একটা ছবি দিয়ে যাই এবেলা। পরে আরও আসবে।
পোটসড্যামার প্লাটজ


বার্লিনে গেলে অবশ্যই রাত নামলে পরে ঘুরে আসবেন 'পোটসড্যামার প্লাটজ'। ওখান থেকে কাছেই রাইসট্যাগ (জার্মান পার্লামেন্ট) আর ব্রান্ডেনবুর্গ গেট। ওদুটোও রাতেই স্বমহিমায় ধরা দেবে আপনার কাছে। তবে রাত দশটার পরে গেলে আমাদের মত দূর থেকেই রাইসট্যাগের ছবি তুলতে হবে।
রাইসট্যাগ (জার্মান পার্লামেন্ট)

ব্রান্ডেনবুর্গ গেট

৭।
লিখতে লিখতে দেখি অনেক লিখে ফেলেছি। এবার থামতে হয়। কোডিং এর কাজ বাকী। কোডিং করে ইদানীং মজা পাচ্ছি। এক মাস্টার্স স্টুডেন্ট এর কোড করা একটা Data Stream Processing Engine আমাকে আরো একটু আপ্রগ্রেড করতে হচ্ছে আমার নিজের রিসার্চের Prototype এর জন্যই। প্রথম দিকে বেশ বেগ পেয়েছিলাম কোড Re-engineering করতে যেয়ে। তবে এখন বেশ আয়ত্ত্বে চলে এসেছে।

পিএইচডি পাওয়ার পূর্বশর্ত পাবলিকেশনস। রানের খাতা খুলতে পেরেছি এই ভেবে বেশ ভালোই লাগছে।

মাস দুয়েক পরে কী তবে দেখা হবে আপনার সাথে? সিঙ্গাপুরে?