শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৩

টুকরো সময় ১

একঃ

সন্ধ্যাবেলা। চুপচাপ বাসাটা। সাধারণত এই বাসাতে সন্ধ্যাতেই আড্ডা জমে। আজ জমছে না। বাবা ঘরে বিছানায় বসা। আমি ব্যাগ গুছাই। ফয়সাল মনে হয় ওর ঘরে। শাহান ও তার রুমে। ইমতিয়াজ ও আছে। বাসায় অনেক লোকজন। কিন্তু চুপচাপ। বিদায়বেলায় এটাই হওয়ার নিয়ম।

এরও বেশ কিছু পরে বাশার ভাই আসে। বাশার ভাই ক্যাব চালক। কালো রঙয়ের ক্যাব তার। আমি নেমে আসি সিঁড়ি থেকে। ব্যাগটা বেশ ভারী। বাবা নামে এর পরে। সাথে অন্যরা। বাবা আর আমি বাশার ভাইয়ের ক্যাবে উঠি। আর বাকিরা ইমতিয়াজের সাদা গাড়িতে।

পথে বাবার সাথে আমার খুব বেশি কথা হয় না। বেশি কথা হয় বাশার ভাইয়ের সাথে। বিদায় বেলায় আপনজনদের সাথে কম কথা বলাই ভাল। ছেলে মানুষ ধরা গলায় কথা বলছে শুনতে ভালো লাগে না। আমরা চলে আসি গন্তব্যে।

অনেক ভীড় এখানে। সমসময়ই থাকে। আমরা একটা কোণায় দাঁড়াই। অল্প কিছু কথা হয় সবার সাথে। নীরবতা আর ভাল্লাগছে না। আমি চলে যেতে চাই। বাশার ভাইকে ক্যাবের টাকা দেই। আর বলে দেই যেন বাবাকে ঠিকমত মালিবাগ নামিয়ে দিয়ে আসে।

বাবা যাবার আগে কি বলেছিল মনে নাই। ওরা বলেছিল বেস্ট অফ লাক। আমি কিছু একটা বলি বোধহয়। গলা কেঁপে যায়। আমি পালিয়ে যাই। অনেকদূরে। আপনজনদের কাছে থেকে দূরে। অনেকদূরে।

দুইঃ

আজ খুব ব্যস্ত ছিলাম সারাদিন। বাইরে বেশ শব্দ। আমি ভাগ্যবান। আমার এই রুম ছেড়ে আর অন্য কোথাও যেতে হবে না। চারটা বছর কাঁটিয়ে দিলাম এই রুমেই। আমার ঘামের গন্ধ দেয়ালে মিশে গেছে এই রুমের।

আমি এত শব্দ পাত্তা দেই না। কাজ করতে থাকি। মাঝে ইডার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে আসি। ও চলে যাবে দেড়টা বাজলেই। ইডা আমাদের গ্রুপের সেক্রেটারি। বা বলা যায় ইডা আমাদের গ্রুপের অভিভাবক। সকল সমস্যার মুশকিল আসান ইডার জানা আছে।

আমি কাজ করতে থাকি। চারটা বাজার সাথে সাথেই লোকজনের আনাগোনা কমে আসে। আজ শুক্রবার। এই দিনে সবাইই একটু তাড়াহুড়োয় থাকে। আমার কাজ শেষ প্রায়।

ঠিক এইসময় আন্দ্রিয়াস আসে রুমে। আমি ওকে বলি শেষ কাজ। হাত মিলাই আমরা দুজনে। কাল ওর জন্য একটা ব্যাগ কিনে ছিলাম। সেটা দেই। সে বার বার বলতে থাকে এটা কেন করছো? আমি বলি, আমার ভালো লাগবে তাই। তুমি অনেক সাহায্য করছো আমাকে এই ৪ বছর। সে বলে, এটাতো আমার-তোমার দায়িত্ব। আমি বলি, সবাই দায়িত্ব পালন করে না। পালিয়ে যায়। আমার গলা কেঁপে যায় আবার। একটু। ইংরেজী ভুল-ভাল হয়ে যায়। সে হাসে। আমিও হাসি।

আন্দ্রিয়াস চলে যায়। আমি শেষকাজ টুকুতে হাত দেই। তাও হয়ে যায় অল্প সময়েই। এখনকার মত কাজ শেষ। আমি ডেস্ক গুছাই। পরিষ্কার করি। আসার সময় আমার কী-বোর্ড টা নিয়ে আসি। সুভ্যেনির হিসেবেই।

রুমের দরজা আটকে নেম প্লেটে চোখ পড়ে। মায়া পড়ে গেছে এখানে। আমি মায়া কাটানোর চেষ্টা করি।

আমি সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকি। আমার এখানের কাজ শেষ আজকে। থিসিস জমা দিয়ে দিলাম।

আমি এবার আপনজনদের কাছে যাবো। অনেক কাছে। অনেক কাছে।


1 টি মন্তব্য:

shahan বলেছেন...

মায়া খুব খারাপ জিনিস। সুযোগ পাইলেই যেকোন জায়গায় শিকড় ফেলে দেয়। বড় যন্ত্রণা।

আপনার নতুন জীবনের জন্য বেস্ট অফ লাক বস।